ঢাকা সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস হয় না সোনাগাজীর অধিকাংশ স্কুলে

সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ১২:০৮ পিএম
মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষক। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও অনীহার কারণে মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেওয়া হয় না বলে দাবি করছেন অভিভাবকেরা। এতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতির নীতিও ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় পর্দায় (প্রজেক্টর) কোমলমতি শিশু-শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।

এ জন্য স্কুলগুলোতে একজন করে শিক্ষককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ট্রেনিং) বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলের ল্যাপটপ, প্রজেক্টর প্রধান শিক্ষক রেখেছেন নিজের বাড়িতে। উপজেলার হাতেগোনা ৫-৭টি বিদ্যালয়ে বছরে দু-একবার মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সোনাগাজী উপজেলার ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫৭টি বিদ্যালয়ে দুটি করে ও ৫৩টি বিদ্যালয়ে একটি করে প্রজেক্টের দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি বিদ্যালয়ে দেওয়া হয়েছে মডেম-সিম, ওয়াইফাই রাউটারসহ নানা ডিজিটাল সরঞ্জাম। ইন্টারনেট বিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পরিশোধ করা হয়।

ল্যাপটপ-প্রজেক্টর বিতরণের আগে প্রতিটি বিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ট্রেনিং) দেওয়া হয়েছে। এসব ডিজিটাল উপকরণ অনেক প্রধান শিক্ষক রেখেছেন নিজের বাড়িতে। এতে করে বিদ্যালয়ের ডিজিটাল শিখন-কার্যক্রমের বাইরে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইউটিউবসহ ব্যক্তিগত ডিভাইসে ব্যবহার করে শেষ হচ্ছে সরকারি টাকায় কেনা ডেটা।

আদর্শগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হয় না। 

সাতবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আলমগীর হোসেন নামের এক অভিভাবক বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে আমার ছেলেকে ভর্তি করিয়েছি। বর্তমানে স্কুলগুলোতে প্রযুক্তিনির্ভর পড়ালেখার জন্য সরকার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের জানামতে, প্রযুক্তিগত উপকরণ থাকলেও শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও অনীহার কারণে একটি মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস পর্যন্ত হচ্ছে না।

সোনাগাজী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক জানান, প্রজেক্টর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করানো সম্ভব হয়নি। কয়েক মাস আগে নতুন প্রজেক্টর পেয়েছি সেটা এখনো সেটিং করা হয়নি। এ ছাড়া আমাদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই।



বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দাবি করছেন, চুরি হওয়ার আশঙ্কায় তারা ল্যাপটপ-প্রজেক্টর বাড়িতে নিয়ে রাখেন। আবার কোথাও কোথাও ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, কিবোর্ড অকেজো, ব্যাটারি নষ্ট কিংবা সাউন্ড সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন অনেকে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম তাহেরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল ক্লাস না হওয়ার অন্যতম কারণ শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব। কয়েকটি বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনায় ল্যাপটপ, প্রজেক্টর প্রধান শিক্ষকের কাছে রাখার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যে নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তা সত্যিই দুঃখজনক। শিগগিরই বিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়ে মনিটরিং শুরু করা হবে।