গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার সংযোগ সড়কের তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ আগামীকাল বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুর ১২টায় উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণলয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া এই সেতু উদ্বোধন করবেন।’
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর এলাকায় এবং কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী এলাকায় নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবিতে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষ আন্দোলন করে আসছিলেন। তাদের এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার জন্য নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর ২০১২ সালে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে। চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সেতুটি নির্মাণ করে। হরিপুর সেতু পয়েন্ট থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট থেকে হরিপুর সেতু পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়কও হচ্ছে।
মোট ব্যয়ের মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ২৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সড়ক নির্মাণে ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা, নদী ব্যবস্থাপনায় ৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং জমি অধিগ্রহণে ৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ৩০টি স্তম্ভ বিশিষ্ট এই সেতুর মধ্যে ২৮টি স্তম্ভ নদীর ভেতরের অংশে এবং ২টি স্তম্ভ নদীর বাইরের অংশে। সেতুর উভয় পাশে নদী নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
নদীর প্রায় ৩ দশমিক ১৫ কিলোমিটার নদী ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়েছে। সেতুর উভয় পাশে ৫৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে চিলমারী থেকে মাটিকাটা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার এবং সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট থেকে হরিপুর সেতু পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকা উল্লেখ রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এই সেতুটি চালু হলে কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলা এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা এবং এর সংলগ্ন উপজেলার কৃষকদের কৃষিপণ্য সময়মতো দেশের বড় বড় শহরে কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য পাঠাতে সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সেতুটির মাধ্যমে স্বল্প সময় ও খরচে শিল্প ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন এবং ছোট ও মাঝারি কলকারখানা প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়াও নদীর উভয় তীরের সংযোগসহ উন্নত রোড নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার ফলে এ অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসার ঘটবে। এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘এটি দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত সবচেয়ে বড় সেতু (১৪৯০ মিটার)। সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলে মানুষ কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় দীর্ঘ ১৩৫ কিলোমিটার যাতায়াত দূরত্ব কমবে।’