গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, ‘হত্যাকাণ্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, এক যুবক প্রকাশ্যে এক তরুণীকে মারধর করছেন। এরপর ৬-৭ জন সশস্ত্র যুবক চাপাতি, রামদা ও ছুরি নিয়ে ওই যুবকের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। হামলার সময় সাংবাদিক তুহিন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হামলাকারীরা তাকেও ধাওয়া করে।
প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে ঈদগাহ মার্কেট এলাকার একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন সাংবাদিক তুহিন। কিন্তু হামলাকারীরা সেখানে গিয়েই তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী এক দোকানি বলেন, ‘তুহিন ভাই দোকানে এসে আশ্রয় নেন। তারপর পাঁচ-ছয়জন লোক চাপাতি ও ছুরি নিয়ে এসে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আমি থামানোর চেষ্টা করলে তারা আমাকে গালাগালি করে এবং হুমকি দেয়। পরে আমি ভয়ে লুকিয়ে পড়ি।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম-উত্তর) মো. রবিউল হাসান জানান, ‘আমাদের ধারণা, একজনকে মারধরের ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হবে।’
ঘটনার পর নিহত তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম ও অপর একজন বাদী হয়ে বাসন থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছেন। বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অপরাধে জড়িত প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
নিহত সাংবাদিক তুহিন (৩৮) ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ‘দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ’-এর গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
তুহিনের ভাই মো. সেলিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ভাইকে কেন হত্যা করা হলো? তার স্ত্রী-সন্তান এখন নিরাপত্তাহীনতায়। দ্রুত বিচার চাই।’
এদিকে, হত্যার প্রতিবাদে স্থানীয় সাংবাদিকরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। ‘গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন’ দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান জানান, ‘ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। খুব দ্রুত আসামিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :