গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক সাহারা মার্কেটে অবস্থিত ফেমাস কেমিক্যাল লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু ও তথ্য গোপনের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা (জোন ৩)-এর উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন- ফেমাস কেমিক্যাল গুদামের মালিক ইসমাইল হোসেন (৪২) এবং তার সহযোগী সোলাইমান (৩৫), তাজুল ইসলাম (৪০) ও রাকিব (৩২)।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে বিসিক সাহারা মার্কেটের ফেমাস কেমিক্যাল গুদামে আগুন লাগে।
খবর পেয়ে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এসময় গুদামে কী ধরনের মালামাল রয়েছে জানতে চাইলে আসামিরা তথ্য গোপন করেন এবং গুদামে কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য নেই বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের জানান। পরে আগুন নেভাতে গেলে হঠাৎ রাসায়নিকের ড্রামে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শাহিন আলম; ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম; তিন ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ, নুরুল হুদা ও জয় হাসান; দোকান কর্মচারী বাবু হাওলাদার এবং পথচারী আশিক আহত হন।
আহতদের মধ্যে খন্দকার জান্নাতুল নাঈম, শামীম আহমেদ, নুরুল হুদা ও বাবু হাওলাদার ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, ফেমাস কেমিক্যালের গুদামে বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক ভর্তি ড্রাম ও বস্তা রাখা ছিল। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ গুদাম মালিকদের রাসায়নিক ও বিস্ফোরকদ্রব্য মজুদ রাখার বিষয়ে বার বার নোটিশ দিয়ে তা সরিয়ে অগ্নি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নে নির্দেশনা দিলেও আসামিরা সুচতুরভাবে কর্তৃপক্ষের সতর্কতামূলক নির্দেশনা অমান্য করেন। এছাড়া সুকৌশলে রাসায়নিক ও বিস্ফোরকদ্রব্য মজুদ করেন তারা।
আসামিরা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করে গুদামে যথাযথ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বিপজ্জনক রাসায়নিক ভর্তি ড্রাম ও বস্তা মজুদ করেন। গুদামে অগ্নিনির্বাপন সরঞ্জাম না রাখা ও তাৎক্ষণিকভাবে আগুন প্রতিরোধ করার মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী না রাখায় ওই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ড, ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের জন্য আসামিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী বলেও উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।
এ ব্যাপারে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. ওয়াহিদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, আগুনের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তবে মারা যাওয়া দোকান কর্মচারী আল-আমিন বাবুর দোকান মালিক সাইফুল ইসলাম লিটন বলেন, বাবুর মাকে বাদী করে আরকটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর সাহারা মার্কেটে অবস্থিত ফেমাস কেমিক্যাল লিমিটেডের গুদামে আগুন লাগে। এতে আগুন নেভাতে গিয়ে আটজন আহত হন। এর মধ্যে দগ্ধ হন টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের চারজনসহ পাঁচজন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর মারা যান ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ, ২৪ সেপ্টেম্বর ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা, ২৬ সেপ্টেম্বর মারা যান দোকান কর্মচারী আল আমিন বাবু ও ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার মারা যান জান্নাতুল নাঈম।