ঢাকা শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

বর্ষায় শ্মশানে লাশ নেওয়ার একমাত্র ভরসা নৌকা

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম
শ্মশানঘাট। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের পঞ্চবটী, আমলাপাড়া ও পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকায় বর্ষাকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃতদেহকে শ্মশান ঘাটে পৌঁছে দিতে একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় নৌকা বা কলাগাছের ভেলা।

সামর্থবানরা ভাড়ায় নৌকা ব্যবস্থা করতে পারলেও অসচ্ছল পরিবারের জন্য তা প্রায় অসম্ভব। তাই দরিদ্ররা স্বজনের লাশ কলাগাছের ভেলায় করে শ্মশানে নিয়ে যান।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্মশান সংলগ্ন রাস্তার দীর্ঘদিনের অবস্থা জনসাধারণের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবির প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার রাস্তাটি পরিদর্শন করেছেন।

শবনম শারমিন বলেন, ‘রাস্তাটি সংস্কার হলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মৃতদেহের সৎকারে আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।’

শ্মশানঘাট

সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড পঞ্চবটীর মূল রাস্তার দক্ষিণ দিকের শেষ মাথা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শ্মশান ঘাটে পৌঁছানোর একমাত্র রাস্তা। স্বাধীনতার ৫৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে কোনো সংস্কার করা হয়নি।

বর্ষার সময় রাস্তার বেশিরভাগ অংশ পানিতে তলিয়ে থাকে। এই সময় শ্মশানে লাশ নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়। শুকনো মৌসুমে কাঁধে করে নেওয়া সম্ভব হলেও বর্ষাকালে কোমর বা বুক সমান পানি থাকে।

সামর্থবানরা নৌকা ভাড়া করতে পারলেও দরিদ্রদের জন্য এটি সম্ভব হয় না। তাই অনেকেই কলাগাছের ভেলা বানিয়ে লাশ শ্মশানে নিয়ে যান।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের আশা, উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে রাস্তাটি সংস্কার করা হলে দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ কমবে।

ভৈরব উপজেলা হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার রায় সুমন বলেন, ‘এই শ্মশান আমাদের শেষ ঠিকানা। স্বাধীনতার ৫৫ বছর পেরিয়ে গেলেও রাস্তাটি সংস্কার হয়নি।

বর্ষাকালে এটি সম্পূর্ণভাবে ডুবে যায়। শ্মশান পৌঁছাতে প্রচুর কষ্ট হয়। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি, রাস্তাটি সংস্কার করে আমাদের ভোগান্তি কমিয়ে আনুন।’

সাবেক পৌর কাউন্সিলার আখতারুজ্জামান আক্তার বলেন, ‘বর্ষার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে লাশ নিয়ে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সামর্থবানরা নৌকা ভাড়া পায়, কিন্তু গরিবদের জন্য তা সম্ভব হয় না। তারা কলাগাছের ভেলায় লাশ শ্মশানে নিয়ে যান। এটি হৃদয়বিদারক দৃশ্য।’

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন বলেন, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একমাত্র শ্মশানঘাটে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তার অবস্থা নাজুক। দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী আমরা উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। খুব শিগগিরই এটি সংস্কার করা হবে।’