ঢাকা শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

দুই দশক পর বেনাপোলের প্রিন্স হত্যার রায়, ভগ্নিপতিসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
দণ্ড পাওয়া দুই আসামি মিজাুনর রহমান মিজান ও সেকেন্দার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বেনাপোলে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক সুজায়েতুজ্জামান প্রিন্স হত্যা মামলায় ২১ বছর পর রায় ঘোষণা করেছে যশোরের আদালত। মামলার রায়ে প্রিন্সের আপন দুলাভাই উদ্ভাবক মিজানুর রহমান মিজানসহ চারজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জয়ন্তী রানী দাস এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, রায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত মিজানুর রহমান মিজান শার্শা উপজেলার আমতলা গাতীপাড়া গ্রামের আক্কাস আলী মোড়লের ছেলে এবং নিহত প্রিন্সের আপন দুলাভাই। অন্য আসামিরা হলেন, বেনাপোল কাগজপুকুর গ্রামের কালু ওরফে ঘাড়কাটা কালুর ছেলে সেকেন্দার আলী, একই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে জসিম উদ্দিন এবং ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটাডাঙ্গা গ্রামের গোলাম মন্ডলের ছেলে ইকবাল হোসেন।

রায়ের সময় আসামি মিজান ও সেকেন্দার আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিচারক তাদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পলাতক অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার অতিরিক্ত পিপি আব্দুর রাজ্জাক।

মামলা বিবরণে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২০ আগস্ট প্রিন্স মোটরসাইকেল নিয়ে নিজ বাড়ি পোড়াবাড়ি নারায়ণপুর গ্রাম থেকে বের হন। এরপর তিনি আর বাড়িতে ফিরে আসেননি। স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। পরদিন সকালে ছোট নিজামপুর গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার পর প্রিন্সের মামা বকতিয়ার রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলা করেন। তিনি মামলার এজাহারে সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, প্রিন্সের মোটরসাইকেলের প্রতি তার দুলাভাই মিজানের লোভ ছিল। মামলাটি তদন্তের পর বেরিয়ে আসে পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতেই প্রিন্সকে হত্যা করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আফজাল হোসেন ওই চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মিজানুর রহমান আধুনিকতার যুগে সামান্য মোটর মেকানিক থেকে একের পর এক যন্ত্র উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তার উদ্ভাবনী কাজের মধ্যে দেশীয় প্রযুক্তিতে অ্যাম্বুলেন্স, স্বয়ংক্রিয় সেচযন্ত্র, জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব যন্ত্র, যা ‘মিজান ইঞ্জিন’ নামে পরিচিতি পায়।

মিজানুর রহমানের স্থানীয় বাজারে মোটর মেকানিকের কাজের পাশাপাশি একটি ‘ফ্রি খাবার বাড়ি’ ছিল। বাড়িটি শার্শার শ্যামলাগাছী এলাকায় অবস্থিত। সেখান থেকে তিনি ভবঘুরে, ভিক্ষুক, গরিব ও অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করতেন।