ঢাকা শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

বাংলাভাষী ও মুসলমানদের বেআইনিভাবে বাংলাদেশে তাড়াচ্ছে ভারত

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
বাংলাদেশে বিতারণের উদ্দেশ্যে আটককৃত ভারতীয়। ছবি- সংগৃহীত

ভারতের কর্তৃপক্ষ কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই দেশটি থেকে শত শত বাংলাভাষী মুসলমানকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ অভিযোগে জোরপূর্বক বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর ভারতীয় নাগরিক।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউমান রাইটস ওয়াচ তাদের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে। সংগঠনটি এ নিয়ে এক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসের ৭ তারিখ থেকে জুনের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ভারত দেড় হাজারেরও বেশি মুসলমান নারী-পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করেছে। এই সংখ্যার মধ্যে আছেন মিয়ানমার থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করা একশ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও। এই সংখ্যা সংগঠনটি পেয়েছে বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ বা বিজিবির দেওয়া তথ্য থেকে। তবে, প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লিখেছে ভারত সরকার এ বিষয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য দেয়নি ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলছেন, ‘ভারতীয় নাগরিকসহ বাঙালি মুসলমানদের দেশ থেকে যথেচ্ছভাবে বিতাড়িত করে দিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি বৈষম্য তৈরি করছে।’

এই প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য জুন মাসে ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে হিউমান রাইটস ওয়াচ, যাদের মধ্যে এমন মানুষও ছিলেন যারা নিজেরাই এই প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। অন্য ৯টি এমন সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যেখানে ভুক্তভোগীদের পরিবারের ব্যক্তিরা কথা বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সঙ্গে।

যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন ভারতীয় নাগরিকও আছেন যারা বাংলাদেশে বিতাড়িত হওয়ার পরে আবারও ভারতে ফিরে এসেছেন এবং আটক হওয়ার পরে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন, এমন কয়েকজনের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছে এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি। ওইসব সাক্ষাৎকারের বিস্তারিতও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশ করেছে তাদের প্রতিবেদনে।

যাদের ভারত থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, তাদের একটা বড় অংশই আসাম আর পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক এবং তারা বাংলাভাষী মুসলমান– এই মন্তব্য বারেবারেই করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

জুলাই মাসের ৮ তারিখ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের প্রাপ্ত তথ্যাবলি দিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল, তবে কোনো জবাব আসেনি।

সংগঠনটি জানিয়েছে, ‘আসাম, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওড়িশা আর রাজস্থানের বিজেপিশাসিত সরকার মুসলমানদের আটক করছে। এদের বেশির ভাগই গরিব, পরিযায়ী শ্রমিক। আটক করার পরে এদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

‘কিছু ক্ষেত্রে সীমান্তরক্ষীরা আটক হওয়া ব্যক্তিদের মারধর করেছে এবং যথাযথভাবে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই না করেই জোর করে বাংলাদেশ সীমান্ত পার করতে বাধ্য করছে। সীমান্ত পার করে দেওয়ার পরে নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পেরেছেন, এ রকম ডজনখানেক মানুষকে ভারত আবারও ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে’ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এপ্রিল মাসে ‘হিন্দু পর্যটকদের ওপরে প্রাণঘাতী হামলা’ হওয়ার পরেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মুসলমানদের হেনস্তা করা শুরু করে পুলিশ, ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ অগ্রাহ্য করে, ফোন নথি এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত সামগ্রী কেড়ে নেওয়া হয় যাতে আটক হওয়া ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও না করতে পারে।

ভারতকে পরামর্শ দিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি মনে করিয়ে দিয়েছে যে, সব ধরনের জাতিগত বৈষম্য নিবারণে আন্তর্জাতিক কনভেনশন, অসামরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী ভারত এটা সুনিশ্চিত করতে বাধ্য- যাতে প্রত্যেকের অধিকার সুরক্ষিত থাকে এবং জাতি, বর্ণ, বংশ ইত্যাদির ভিত্তিতে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত না হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনটিতে মূলত নজর দেওয়া হয়েছে যেসব মানুষকে বাংলাদেশে ‘বিতাড়ন’ করা হয়েছে, তাদের ওপরে।