বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল কেড়ে নিচ্ছে তরুণ প্রাণ, ভেঙে দিচ্ছে পরিবারগুলোর স্বপ্ন। এমনই একটি করুণ ঘটনার শিকার যশোরের আসিফ হোসেন (১৭)।
পরিবারের একমাত্র সন্তান আসিফ যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত ২৫ মে যশোর শহরের পালবাড়ি তেঁতুলতলায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়।
পরিবারের ভাষায়, আসিফকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু একটি বাইকের বেপরোয়া গতিই সেই স্বপ্নকে নিমিষেই মাটি করে দেয়। এমন ঘটনার সংখ্যা যশোরে বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে।
তরুণদের অসতর্ক ও নিয়মবহির্ভূতভাবে মোটরসাইকেল চালানোয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা। গত তিন মাসেই যশোরে অন্তত ১০ তরুণের মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। উৎসব বা ছুটির দিনগুলোতে দুর্ঘটনার হার আরও বেড়ে যায়।
গত ২৭ জুন নবীবনগরের চারাতলা এলাকায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান শিহাব শিকদার (২২)। বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি সড়কে পড়ে গেলে পেছন থেকে আসা ট্রাক তাকে পিষে দেয়।
ঈদুল আজহার দিন (৬ জুন) সাতক্ষীরার তিন তরুণ যশোরের গদখালী এলাকায় ঘুরতে এসে দুর্ঘটনায় পড়েন। হৃদয় হোসেন (১৮) নিহত হন, আহত হন তার দুই বন্ধু আবু সাঈদ ও নীরব হোসেন। ঘোরাঘুরি শেষে বাড়ি ফেরার পথে গদখালী রেললাইনের কাছে মোটরসাইকেল বৈদ্যুতিক পিলারে আঘাত করলে ঘটনাটি ঘটে।
এর আগে ৩০ এপ্রিল চুড়ামনকাটির দোগাছিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান তরুণ জুতা ব্যবসায়ী উজ্জল। তার মৃত্যুতে পরিবার চরম অসহায় অবস্থায় পড়ে গেছে।
যশোরের বিভিন্ন সড়কে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুবকেরা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। উচ্চ শব্দে হর্ন বাজিয়ে, আঁকাবাঁকা পথে ও চলন্ত যানবাহনের সামনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এতে শুধু নিজেরাই নয়, অন্যরাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
চলতি জুলাই মাসে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ২৮ জন তরুণ। হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্টারে এ তথ্য মিলেছে।
চুড়ামনকাটির বাসিন্দা ইমদাদ হোসেন, ওয়াহিদুজ্জামান মিলন ও আলমগীর কবীর জানান, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অভিজ্ঞতাহীন তরুণদের বেপরোয়া চালনায় সড়ক ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। তারা বলেন, ‘আমরা সাবধানে চললেও আতঙ্কে থাকি কখন কোন তরুণ এসে ধাক্কা দেবে।’
তারা আরও বলেন, ‘তরুণরা উৎসবের দিনে প্রতিযোগিতার মতো বাইক চালায়। পরিবার ও অভিভাবকেরাও এতে বাধা দিচ্ছেন না, যা উদ্বেগজনক।’
যশোর ট্রাফিক পুলিশের ইনস্পেক্টর মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বেপরোয়া বাইক চালকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে শহর ও শহরতলীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। নিবন্ধনবিহীন ও লাইসেন্সহীন চালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তারপরও তরুণদের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও কার্যকর নজরদারি প্রয়োজন।’

 
                             
                                    



 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                    -20251031233315.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031164732.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন