ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫

‍‍শহীদ ছেলের কবরের পাশে কাঁদেন মা-বাবা‍‍

যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৫, ০৯:৫৭ পিএম
যশোরের শহীদ তৌহিদুর রহমানের বাবা ও মা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যশোরের তরতাজা যুবক তৌহিদুর রহমান (২৮)। শহীদ হওয়ার ১ বছরেও মমতাময়ী মা ছেলেকে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। আজও ছেলের স্মৃতি কাঁদায় বৃদ্ধ বাবাকে। অকালে স্বামী হারা নাসরিন আক্তার অনেকটা নির্বাক। তিন বছরের মেয়ে আয়েশা আয়াত ঘুমের ঘোরে বাবাকে খোঁজে।

তৌহিদুরের মৃত্যুর পর তার সুখের পরিবারে নেমে এসেছে বিষাদের কালো ছায়া। ঠিকমতো সংসারটাও চলছে না। নুন আনতে পানতা ফোরায় অবস্থা। বাবা-মা বলছেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই শোক কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। ছেলেকে ছাড়া জীবন খুব কষ্টের।

স্বজনরা জানিয়েছেন, যশোরের কেশবপুর উপজেলার ভালুকঘর গ্রামের জব্বার মোল্যার ছেলে তৌহিদুর রহমান ঢাকায় ক্রয়ডন কাউলুন ডিজাইনস লিমিটেডে জুনিয়র স্পটম্যান পদে চাকুরি করতেন। তিনি ঢাকার আশুলিয়ায় গণঅভ্যুত্থানে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তৌহিদুরের রোজগারের অর্থে চলত পরিবার। ফলে তার মৃত্যুর খবরে পরিবারের সদস্যদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। সেই থেকে তৌহিদুরকে হারানোর শোক বইয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে পরিবারের সদস্যরা।

ছেলের কবরের পাশে গিয়ে কান্না করেন বাবা-মা। চোখের পানিতে তাদের বুক ভেসে যায়।

বাবা জব্বার মোল্যা জানান, তৌহিদুরের স্মৃতি প্রতিটা মুহূর্তে পীড়া দেয়। মৃত্যুর দুই দিন আগে ফোনে বলেছিল যে খুব তাড়াতাড়ি বাড়িতে বেড়াতে আসবে। ঠিকই আসল তবে লাশ হয়ে। তৌহিদুরের মৃত্যুর পর তারা বড় অসহায় হয়ে পড়েছেন। তবুও তিনি গর্ব করেন তার ছেলে দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। দেশের মানুষ আজ বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে।

মা রাশিদা বেগম জানান, তার বুকের ধন হারিয়ে গেছে। তার সকল সুখ কবরস্থ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আদরের সন্তান তৌহিদুরকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না। মনে হচ্ছে ঢাকা থেকে এসে মা মা বলে আমাকে ডাকছে। একটা বছর চোখে ঘুম নেই। চোখ বুঝলেই ছেলের মুখটা ভেসে ওঠে। ছেলেকে হারিয়ে তারা ভালো নেই।’

রাশিদা বেগম আরও জানান, ‘ওর (তৌহিদুর) বাবার বয়স হয়েছে। ভারি কোনো কাজ করতে পারে না। ছেলের টাকায় সংসার চলত। এখন ‘নুন আনতে পানতা ফোরায়’ অবস্থা।

এদিকে, অকালে স্বামীকে হারিয়ে অনেকটা নির্বাক তৌহিদুরের স্ত্রী নাসরিন আক্তার। সারাক্ষণ চুপচাপ বসে কী যেন ভাবেন। হয়তো স্বামীর স্মৃতি আওড়ে নীরব দহনে পোড়েন। কারও সাথে ঠিকমতো কথাও বলেন না। অনেকটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। 

নাসরিন আক্তার জানান, তার তিন বছরের মেয়ে আয়শা আয়াত রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে আব্বু আব্বু বলে কাঁদতে থাকে। আব্বুর মতো করে কেউ তাকে ভালোবাসতে পারে না।

তৌহিদুরের নানা স্মৃতি আঁকড়ে ধরে তাদের সময় পার হয়ে যাচ্ছে।