ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

রোগী নয়, লক্ষ টাকা বাণিজ্য! যশোর হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট

যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০২:৪৯ পিএম
যশোর হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, বিপাকে রোগী ও স্বজনরা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকদের সমন্বয়ে গঠিত এই সিন্ডিকেট সরকারি হাসপাতালের ভেতর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে রোগী ও লাশ বহনের ক্ষেত্রে স্বজনদের জিম্মি করে রেখেছে।

সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হলে দিতে হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এরপরই অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে হাসপাতালে দাঁড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়। কেউ সিন্ডিকেটের বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স আনতে চাইলে তাকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। ফলে রোগী কিংবা লাশ পরিবহনে বাইরে থেকে কম ভাড়ার অ্যাম্বুলেন্স আনলেও ব্যবহার করতে পারছেন না স্বজনরা।

চুড়ামনকাটি গ্রামের মাসুদুর রহমান মাসুদ জানান, ‘আমার চাচাতো ভাই কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। অবস্থা খারাপ হওয়ায় ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। বাইরে থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করলেও তা হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকায় সিন্ডিকেটের একটি অ্যাম্বুলেন্স নিতে হয়েছে।’

একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে বাঘারপাড়া উপজেলার ইব্রাহিম হোসেনের পরিবারের। ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুয়ারা বেগমের (৪০) মরদেহ নিতে আড়াই হাজার টাকা দিতে বাধ্য হন তারা। অন্য কোনো বিকল্প ছিল না, কারণ হাসপাতালে অবস্থানরত অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, মর্গ ও জরুরি বিভাগের সামনে গিজগিজ করছে অ্যাম্বুলেন্স। চালকেরা ঘোরাফেরা করছে সম্ভাব্য যাত্রী শিকারের জন্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে স্থানীয় এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি হাসপাতাল চত্বরে অবৈধভাবে স্ট্যান্ড গড়ে তুলে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে।

প্রতি অ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রতি মাসে নেওয়া হয় চাঁদা। আর তার বিনিময়ে তাদের ব্যবসা হয় ‘নিশ্চিন্ত’। ফলে অতিরিক্ত ভাড়া দিলেও রোগী ও স্বজনরা বাধ্য হন সিন্ডিকেটের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে।

এর আগে প্রশাসনের উদ্যোগে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছিল। উচ্ছেদ করা হয় অবৈধ স্ট্যান্ড, জরিমানা করা হয় চালকদের। কিছুদিন স্থবির থাকার পর আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। বর্তমানে জরুরি বিভাগ ও করোনারি কেয়ার ইউনিটের সামনে ফের গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, ‘অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা অবশ্যই অন্যায় ও অমানবিক। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’