যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের চান্দুটিয়া গ্রামে ফায়ার রেঞ্জ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে দুই দিনে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বেলা তিনটার দিকে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন আবুল কাশেম (৬০)। হঠাৎ একটি গুলি ঘরের টিনের চাল ভেদ করে তার বুকের ডান পাশে আঘাত করে। এতে তিনি রক্তাক্ত হন। এর আগের দিন শনিবার বাড়ির উঠানে খেলার সময় গুলিতে আহত হয় শিশু ফাতেমা খাতুন (১০)। বর্তমানে তারা বিশেষ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফায়ার রেঞ্জে প্রশিক্ষণের সময় লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকালে চান্দুটিয়া গ্রামের রুবেল হোসেনের মেয়ে ফাতেমা বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। হঠাৎ করে একটি গুলি এসে তার কোমরে লাগে। ঘটনাটিতে পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ফাতেমাকে উদ্ধার করেন।
প্রথমে তারা বুঝতে পারেননি গুলিটি কোথা থেকে এসেছে, পরে নিশ্চিত হন এটি ফায়ার রেঞ্জ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলি। পরের দিন রোববার একই গ্রামের আবুল কাশেমের ঘরে লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলি ঢুকে তার বুকে লাগে। ভাগ্যক্রমে দুজনই প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।
চান্দুটিয়া গ্রামের পারভেজ হোসেন বলেন, ‘দুই দিনে দুইজন গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনায় চান্দুটিয়ায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছোট-বড় সবাই ভয় নিয়ে চলাফেরা করছেন। অনেক কৃষক মাঠে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। ফায়ার রেঞ্জকে আধুনিক ও নিরাপদ ব্যবস্থায় উন্নত করার দাবি জানাই।’
গ্রামের আরেক বাসিন্দা সনজিৎ বিশ্বাস জানান, কয়েক বছর আগে ফায়ার রেঞ্জে প্রশিক্ষণের সময় লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলি গ্রামে এসে পড়ত। পরে কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন আবার একই ঘটনা ঘটছে। এতে গ্রামবাসী আতঙ্কে রয়েছেন।
স্থানীয় আরও কয়েকজন জানান, ফায়ার রেঞ্জ থেকে চান্দুটিয়া গ্রামের দূরত্ব তিন কিলোমিটারের বেশি। গ্রামে সবসময় মানুষের চলাচল থাকে। এমন এলাকায় গুলি পৌঁছানো অত্যন্ত দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতন হওয়া এখন জরুরি, নতুবা প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
গুলিতে আহত দুইজনের পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘গুলির আঘাত থেকে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি, এটা ভাগ্য। এখন মনে হয়, নিজের বাড়িতেও কেউ নিরাপদ নয়। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
ফায়ার রেঞ্জ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে দুই দিনে দুইজন আহত হওয়ার খবর ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এই বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, ‘ফায়ার রেঞ্জে প্রশিক্ষণের সময় লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে পাশের চান্দুটিয়া গ্রামের শিশুসহ দুইজন আহত হওয়ার ঘটনা শুনেছি। শনিবার ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সেখানে প্রশিক্ষণ করছিল। পুলিশ ছাড়াও ফায়ার রেঞ্জে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা অনুশীলন করেন।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন