যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ডাক্তারের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দুপুরের পর থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলেনা।
গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগ ইন্টার্ন ও মেডিকেল অফিসারের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ অবস্থার জন্য রোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘নামে তালপুকুর, বাস্তবে ঘটি ডোবে না।’
যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিট ২০০৫ সালে নির্মিত হয় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে। ২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর উদ্বোধন করা হলেও জনবলের অভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হতে দেরি হয়। ২০০৯ সালের ১২ জুলাই হাসপাতালের নিজস্ব জনবল দিয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও এখনও বিভাগটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
বর্তমানে সিসিইউতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট ও মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপকরা রোগী দেখেন। তবে অভিযোগ, তারা দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না। তাদের ইচ্ছামতো ওয়ার্ড রাউন্ড করা, বর্হিবিভাগে রোগী দেখা এবং জরুরি অবস্থায় অনুপস্থিতি রোগীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিসিইউতে মোট ২৮টি শয্যা রয়েছে, তবে প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। অধিকাংশ রোগী দরিদ্র। রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালের বাইরের ক্লিনিক থেকে করতে হয় এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে এবং দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
একাধিক রোগী ও স্বজন জানিয়েছেন, ‘সকালে চিকিৎসকরা রাউন্ডে আসেন কিন্তু বিকেল থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখা মেলেনা। জরুরি বিভাগে ইন্টার্ন বা মেডিকেল অফিসার দায়িত্ব পালন করেন। ওষুধ বিতরণ ও প্রেসার পরিমাপ ছাড়া কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না।’
গত ২৪ জুন চুড়ামনকাটি গ্রামের মৃত আব্দুল হাই তরফদারের স্ত্রী জাহানারা বেগমকে মেডিসিন বিভাগ থেকে সিসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। রোগীর শ্বাসকষ্ট থাকা সত্ত্বেও অক্সিজেন না দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়। ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান মিলনের অভিযোগ, চিকিৎসা অবহেলার জন্য তার মা মারা গেছেন।
রোগী ও স্বজনদের দাবি, ‘সিসিইউতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেশন ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অধিকাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ বাইরে থেকে করতে হয়, যা সাধারণ মানুষের জন্য অসহনীয়।’
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘করোনারি কেয়ার ইউনিট নানা সংকটের মধ্যেও চলমান। রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে। চিকিৎসা অবহেলায় রোগীর মৃত্যু ঘটলে তা অত্যন্ত কষ্টকর।’


