ঢাকা বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

এইডসের ভয়াবহ ঝুঁকিতে যশোর

যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম
প্রতীকী ছবি

যশোরে এইচআইভি/এইডসের ভয়াবহ ঝুঁকি বিরাজ করছে। গত ১৩ মাসে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এআরটি (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) সেন্টার ও কেপি (কে পপুলেশন) সেন্টারে ৫ হাজার নারী-পুরুষের রক্ত পরীক্ষায় ৪৯ জনের এইডস শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪১ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী। এদের মধ্যে ১৭ জন শিক্ষার্থী, ৩ নারীসহ ১২ জন প্রবাসী এবং ২০ জন সমকামী রয়েছেন। শনাক্ত ৪৯ জনের মধ্যে ৩২ জনই যশোর শহর ও সদর উপজেলার বাসিন্দা।

জেনারেল হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর সুদেব কুমার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে তাদের সেন্টার থেকে খুলনা বিভাগের ৯ জেলার ২৪৮ জন এইডস রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন।

জানা গেছে, যশোর জেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে এইডস সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ২০২৪ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৫ জন। ২০২৫ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন বিবাহিত। আক্রান্ত ১২ জন প্রবাসীর মধ্যে ৩ নারী ভারত ও সৌদি আরব থেকে ফেরত এসেছেন। বাকি ৯ জন পুরুষ ভারত ও মালয়েশিয়া ফেরত। সীমান্ত অতিক্রম করে অবাধ যাতায়াতকারী, ভাসমান যৌনকর্মী, সমকামী ও কনডম ব্যবহারে অনীহাকারীদের কারণে এইডস মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। এতে সচেতন মহল, অভিভাবক ও স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর সুদেব কুমার বলেন, ‘গত ১৩ মাসে ৪৯ জন নারী-পুরুষ এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জন মারা গেছেন। আক্রান্তদের সরকারিভাবে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হয়। বিদেশফেরত ব্যক্তি, ভাসমান যৌনকর্মী, মাদকসেবী, হিজড়া ও সমকামীদের কারণে খুলনা অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এইডসের প্রাদুর্ভাব রোধে জনসচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।’

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত, ছাত্রাবাস, আবাসিক মেস, অনিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণ এবং পারিবারিক নজরদারির অভাবে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এইডস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারি সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এইচআইভি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করা যায়। অন্যথায় যশোরাঞ্চল ভয়াবহ সংকটের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘হাসপাতালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এইডসে আক্রান্ত দুই নারীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়েছে। প্রত্যেক গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে এইচআইভি পরীক্ষা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আক্রান্ত নারী-পুরুষদের হাসপাতালের এআরটি সেন্টার থেকে নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।’