যশোরের কেশবপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ আটক বহিষ্কৃত যুবদল নেতা ওয়ালিউর রহমান উজ্জলের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহতের স্ত্রী ও স্বজনদের অভিযোগ, যৌথবাহিনীর নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে উজ্জলের মৃত্যু হয়।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। আজ শনিবার দুপুরে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
নিহত উজ্জল কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল গ্রামের নাজির হোসেন বিশ্বাসের ছেলে। তিনি কেশবপুর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে আটক করেন। তারা হলেন- কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতি নরেন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে পৌর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশ (৪০) ও তার ভাই আলমগীর ওরফে আলম (৩৫), আলতাপোল গ্রামের নাজির বিশ্বাসের ছেলে ওয়ালিউর রহমান উজ্জল (৪০) এবং নতুন মূলগ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে রাসেল (৩০)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার সকালে আটককৃতদের কেশবপুর থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠায়।
নিহতের স্ত্রী ফারজানা আক্তার ফারিহা জানান, ঘটনার রাতে উজ্জল বাড়িতেই ছিলেন। রাত দুইটার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা এসে তাকে আটক করেন। এরপর রশি দিয়ে হাত বেঁধে ও মুখে রড গুঁজে মারধর করেন। এভাবে রাত আড়াইটা থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে তার স্বামী মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নিহতের ভাবি কবিতা খাতুন জানান, পরিবারের সদস্যদের ঘরে আটকে রেখে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ইচ্ছামতো উজ্জলকে মারধর করেছে। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লেও সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। কবিতা আরও জানান, উজ্জলকে আটকের সময় তার কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না, তাকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। উজ্জলের মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক বিচার দাবি করেন তিনি।
নিহতের বড় ভাই, কেশবপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু জানান, যৌথবাহিনীর সদস্যদের অমানবিক নির্যাতন ও সঠিক সময়ে চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় তার ভাই উজ্জলের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার সঠিক তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
চাচাতো ভাই দেলোয়ার ও জাহাঙ্গীর আলমসহ স্বজনরা জানান, আটকের পর উজ্জলকে প্রচণ্ডভাবে মারধর করা হয়েছে। নির্মম নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হলেও চিকিৎসাসেবা পাননি।
কেশবপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে বিদেশি পিস্তল, গুলি ও ৬০ গ্রাম গাঁজাসহ উজ্জলসহ ৪ জন আটক হন। শুক্রবার সকালে যৌথবাহিনী তাদের পুলিশে হস্তান্তর করে। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। অস্ত্র ও মাদক মামলায় আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। শনিবার সকালে জানতে পারি উজ্জল মারা গেছেন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবিদ আহমেদ জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উজ্জলকে কারাগারে আনা হয়। সাড়ে ১০টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার নথিতে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন—এমন একটি এমসি মেডিকেল সার্টিফিকেট ছিল।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. বিচিত্র মল্লিক জানান, উজ্জলকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনেন কারারক্ষী আনিচুর রহমান। মারধরের শিকার হয়ে তিনি কারাগারে এসেছেন, এমনটা জানানো হয়। পরে মৃতদেহ মর্গে পাঠানো হয়। শনিবার দুপুরে মেডিকেল অফিসার ডা. শাকিরুল ইসলাম তার (উজ্জল) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন।
যশোরের পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম জানান, উজ্জলের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, উজ্জল কেশবপুর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। বর্তমানে তিনি বহিষ্কৃত। হেফাজতে তার মৃত্যুর বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন অনিন্দ্য ইসলাম।




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন