টানা বৃষ্টিতে মরিচের বড় উৎপাদনকারী জেলা ঝিনাইদহে মরিচ চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জমিতে পানি জমে থাকা এবং পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত রোদের কারণে মরিচ গাছ মরে যেতে শুরু করেছে। এতে শঙ্কায় পড়েছেন জেলার হাজারো মরিচ চাষি।
জেলায় এ বছর ১,৮৩২ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,৭৯২ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৭,৭৯৫ মেট্রিক টন। কিন্তু আবহাওয়ার বৈরিতায় এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সদর উপজেলার চান্দেরপোল গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘১৫ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৫ শতকে গাছ বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।’
একই গ্রামের আবজাল হোসেন ও জবেদ আলীসহ অনেকে একই ধরনের সমস্যার কথা জানান।
ঘোড়ামারা গ্রামের কৃষক মিলন হোসেন বলেন, ‘১ বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। অল্প কিছু মরিচ তুলতে পেরেছি, এর পরেই গাছ মরা শুরু হয়েছে।’
কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা ও ইকড়া গ্রামের কৃষকদের ক্ষেতেও একই অবস্থা। তাদের ভাষ্যমতে, গাছগুলো বাঁচানোর জন্য ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেও ফল মিলছে না।
ঝিনাইদহের বাজারে এখন কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে। মাত্র দুই দিন আগেও এই দাম ছিল ৭০ থেকে ১১০ টাকা। তবে দাম বাড়লেও ক্ষতির কারণে কৃষকদের মুখে হাসি নেই।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলার সদর উপজেলায় সবথেকে বেশি জমিতে মরিচের আবাদ হয়। এ বছরও সদর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০৬৪ মেট্রিক টন। হরিণাকুণ্ডু উপজেলাতে এ বছর আবাদ হয়েছে ৪১৫ হেক্টর জমিতে। এ উপজেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪১২২ মেট্রিক টন। এছাড়া শৈলকুপায় আবাদ হয়েছে ১৬৫ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১২২ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ২৯ হেক্টর ও মহেশপুরে ২৯০ হেক্টর জমিতে।
এর মধ্যে সদর উপজেলা ও কোটচাঁদপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মরিচ ক্ষেতে মরিচ গাছ মারা যাচ্ছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই মৌসুমে বৃষ্টিপাত সাধারণত বেশি হয়। ঝিনাইদহ উঁচু অঞ্চল হওয়ায় এখানে পানি জমে থাকার ঘটনা বিরল, তবে এবার অনেক জায়গায় জমিতে পানি জমেছে এবং পরে অতিরিক্ত রোদের কারণে গাছ মরে যাচ্ছে। গাছ রক্ষায় ছত্রাকনাশক স্প্রে ও বৃষ্টির সময় জমিতে হাঁটাচলা না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
আপনার মতামত লিখুন :