জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নওগাঁ কাঁঠালীতে বসবাসরত মিনারা বেগম এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। একসময় সংসারে অভাব-অনটনের ঘানি টানলেও এখন হাঁস পালন করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন তিনি। তার সাফল্য দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন এলাকার অন্যান্য নারীও।
স্বামী ফজলুর রহমান একজন প্রান্তিক চাষি। পরিবারে জমিজমা না থাকায় দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। ছেলে-মেয়ের বিয়ে ও ছোট মেয়ের পড়াশুনার খরচে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এসব কষ্টের মাঝে দাঁড়িয়ে মিনারা বেগম নতুন পথ খোঁজেন।
পাঁচ বছর আগে পার্শ্ববর্তী ঘোড়াঘাট উপজেলার বলাহার গ্রামে ভাইয়ের হাঁসের খামার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে হাঁস পালনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মাত্র ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে অস্ট্রেলিয়ান জাতের ৫০০ হাঁসের বাচ্চা দিয়ে খামার শুরু করেন। প্রথম ব্যাচেই ১ লাখ ১১ হাজার টাকার হাঁস বিক্রি করে প্রায় ৬০ হাজার টাকা লাভ করেন মিনারা।
বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ১ হাজার ৬০০টি হাঁস। এ বছর লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। হাঁসের খামারই তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি ছোট মেয়ের দাওরায়ে হাদিস পর্যায়ের পড়াশুনাও শেষ করেছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিনারা বেগম বাড়ির পাশে নেট ও বেড়া দিয়ে ঘেরা খামারে হাঁসদের খাবার দিচ্ছেন। তিনি জানান, প্রতিবছর এই মৌসুমে হাঁস পালন করেন। সিরাজগঞ্জের একটি হ্যাচারী থেকে প্রতি পিচ হাঁসের বাচ্চা ৩৬ টাকা দরে কিনে আনেন। বাচ্চা তিন থেকে চার মাস লালন-পালন করলেই বিক্রির উপযুক্ত হয়। তখন প্রতি হাঁস ১৯০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
খরচ বাঁচাতে হাঁসদের বাজারের খাবার না দিয়ে ফাঁকা মাঠে ছেড়ে প্রাকৃতিক খাবার সংগ্রহ করান তিনি। তবে হাঁস পালনে কিছু ঝুঁকির কথাও জানিয়েছেন মিনারা বেগম। জ্বর, সর্দি, হাপানি ইত্যাদি রোগে হাঁস আক্রান্ত হলে ওষুধের খরচ বেড়ে যায় এবং প্রাণিসম্পদ অফিসে দূরত্বের কারণে সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে মিনারা বেগম বলেন, ‘আমি আমার খামার বড় করতে চাই এবং একটি হ্যাচারীও গড়ার চিন্তা করছি।’
তার এই সফলতার পথ অনুসরণ করে একই গ্রামের নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ইতোমধ্যেই ৫০০ হাঁস নিয়ে খামার শুরু করেছেন এবং ভবিষ্যতে খামার বড় করার পরিকল্পনাও করছেন।
এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাসান আলী বলেন, ‘মাদের উপজেলায় অনেক হাঁস খামারি রয়েছেন। তারা নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং পরামর্শ গ্রহণ করেন। মিনারা বেগম তাদের একজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দ্রুত টিকা, চিকিৎসা এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিই। এই খামারিরাই ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।’
আপনার মতামত লিখুন :