ঢাকা শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫

আগামী নির্বাচনে দুর্নীতিবাজদের লাল কার্ড দেখাবে ছাত্র-জনতা: গোলাম পরওয়ার

খুলনা ব্যুরো
প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ০৯:২৭ পিএম
ছাত্র গণজমায়েতে ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম ও জাকসুর জিএস মাজহারুল ইসলামের হাত উঁচু করে ধরেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন, আগামী নির্বাচনে জাতি তাদেরকে লাল কার্ড দেখাবে। কেননা বিগত ৫৪ বছরের শাসনামলে রাষ্ট্রের শাসন, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, কৃষি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্রেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ের সরকার দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ভিন্নমতের ওপর নির্যাতনসহ জনঅবস্থার অবনতি ঘটিয়েছে।’

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুর আন্দুলিয়া ফুটবল মাঠে ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ছাত্র গণজমায়েতে প্রধান অতিথিরস বক্তব্যে এসব কথা বলেন গোলাম পরওয়ার।

ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হুসাইনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) জিএস মাজহারুল ইসলাম।

এতে বক্তব্য দেন ডুমুরিয়া হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী, রাকসুর হবিবুর রহমান হল সংসদের ভিপি আহমদ আহসান উল্লাহ ফারহান, জাকসুর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবু তালহা, মালয়েশিয়া প্রবাসী আবু হানিফ আকুঞ্জি, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী আমীর, খুলনা–৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও গাউসুল আযম হাদী, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা প্রমুখ।

ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আহমদ আতাউল্লাহ সালমান। উপস্থিত ছিলেন শেখ সিরাজুল ইসলাম, মোস্তফা আল মুজাহিদ, ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, আব্দুল ওয়াদুদ সরদার, আব্দুল কাইয়ুম আল ফয়সাল, ড. ইকরাম উদ্দীন সুমন প্রমুখ।

মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘যারা ৫৪ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, তাদের আমলে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, জুলুম–নির্যাতন, টাকা পাচার—এসবের দায় কে নেবে?’

তিনি আরও দাবি করেন, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও মাঠদখল, বাজার–ঘাটের নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি আগের ধারার মতোই চলছে। তবে এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মিয়া পরওয়ার বলেন, জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। পুরনো রাজনৈতিক ধারা, দুর্নীতি ও দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে একটি ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। “উই নিড চেঞ্জ—এই পরিবর্তন আনতে পারবে জামায়াত,” বলেন তিনি।

বক্তব্যে তিনি জামায়াত আমির ড. শফিকুর রহমানের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জামায়াতের এমপি-মন্ত্রীরা কোনো ট্যাক্স-ফ্রি গাড়ি, প্লট বা বিশেষ সুবিধা নেবে না—এ প্রতিশ্রুতি অন্যান্য দলের নেতারা দিতে পারেন না।’

তিনি দাবি করেন, উন্নয়ন খাতের বরাদ্দ জনগণের সামনে প্রকাশ করে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গঠন করবে জামায়াত।

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মিয়া পরওয়ার বলেন, ‘ভয় পাবেন না। আপনারা যেমন নৌকা, ধানের শীষ, লাঙলে ভোট দিতে পারেন, দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার অধিকারও আপনাদের আছে।” তিনি অভিযোগ করেন, ভীতি সৃষ্টি করে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা সামাজিক সহাবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

প্রবাসী শ্রমিকদের সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট, রেজিস্ট্রেশনসহ নানা হয়রানি বন্ধে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ সকল প্রশাসনিক জটিলতা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

তিনি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, ডিসি, এসপি, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দিনের ভোট রাতে হলে তার পরিণতি কী হয়, দেশ তার মূল্য দিয়েছে। এবার কেউ ভোট ডাকাতির চেষ্টা করলে দায় এড়াতে পারবেন না।’

আগামী তফসিল ঘোষণার আগে সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি।

‘ভোটের দিন সকাল থেকে কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। কষ্ট করে আদায় করা ভোট কাউকে নিতে দেওয়া হবে না,’ বলেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাকসু ভিপি সাদেক কায়েম বলেন, ‘একটি দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে ইতিমধ্যেই দুই শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। সুতরাং যে দল নিজের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই দলের কাছে দেশ নিরাপদ নয়।’

তিনি বলেন, আগামীর বিপ্লব হবে ইনসাফের বিপ্লব। এজন্য তিনি ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।