পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা পারিশ্রমিকে ৩ হাজার ৫৭টি কবর খুঁড়ে ‘শেষ যাত্রার সাথী’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন মনু মিয়া। কিন্তু বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শয্যাশায়ী এই মানুষটির জীবন এখন সংকটাপন্ন।
এর মধ্যেই বাড়িতে থাকা তার ঘোড়াটি কে বা কারা হত্যা করেছে। এলাকাবাসী ও স্বজনদের ধারণা, দুর্বৃত্তদের হাতেই প্রাণ গেছে মানবিক এই মানুষটির চলাচলের একমাত্র অবলম্বনটি।
৬৭ বছর বয়সি মনু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামে। মৃত্যুর সংবাদ পেলেই কোদাল-খুন্তি হাতে নিয়ে কবরস্থানে ছুটে যেতেন তিনি। ঘোড়ায় চড়ে হাওরের দুর্গম পথ পাড়ি দিতেন শুধু মাত্র মানুষকে শেষ বিদায়ে সঙ্গ দিতে।
কিন্তু শুক্রবার (১৬ মে) সকালে মিঠামইনের হাশিমপুর ছত্রিশ গ্রামের একটি মাদ্রাসার পাশের পানির মধ্যে পাওয়া যায় সেই ঘোড়ার নিথর দেহ। ঘোড়াটির বুকে পাওয়া গেছে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না কেউই।
মনু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উনার অবস্থা ভালো না। এমন অবস্থায় খবরটা জানালে উনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন। তাই আপাতত আমরা কিছু জানাইনি।’
মানবিক এই গোরখোদকের খ্যাতি রয়েছে শুধু ইটনা নয়, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জ এমনকি রাজধানীর বনানী কবরস্থান পর্যন্ত। কবর খোঁড়ার পাশাপাশি তিনি মৃতদের নাম, ঠিকানা ও মৃত্যুর তারিখ সংরক্ষণ করেন নিজের ডায়েরিতে।
স্থানীয় বাসিন্দা এস এম রিজন বলেন, ‘মনু মিয়া সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তার অনুপস্থিতিতে প্রিয় সঙ্গী ঘোড়াটিকে এভাবে হত্যা করা খুবই নিন্দনীয়।’
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার বলেন, ‘মিঠামইন থানার ওসিকে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
মনু মিয়ার নিঃস্বার্থ সেবা আজ অনেকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু তার এমন সংকটে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
আপনার মতামত লিখুন :