ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

রাতে ঝুঁকিপূর্ণ তাড়াইল উপজেলা চত্বর, চার দশকেও অসম্পূর্ণ অবকাঠামো

তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০২:২৫ পিএম
তাড়াইল উপজেলা পরিষদ ভবন। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা পরিষদ চার দশক পার করলেও এখনো রয়েছে সীমানা প্রাচীর বিহীন। কোর্ট ভবন, প্রশাসনিক অফিস, সরকারি যানবাহন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন এবং অন্যান্য সরকারি স্থাপনা রাতের বেলায় নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন।

স্থানীয়রা বলছেন, চুরি, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদকসেবীসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম চত্বরকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। চার দশক ধরে চলমান এই অব্যবস্থাপনা শুধু প্রশাসনিক ঝুঁকি নয়, স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তার জন্যও একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাড়াইল উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত কোর্ট ভবনটি ১৯৮৫ সালে উদ্বোধন করেন তৎকালীন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আবদুল মতিন খান চৌধুরী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক এম. এ. মানান, কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ এম. এম. রুহুল আমিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ. কে. গোলাম রসুল খান, জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আলম, জেলা গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইমদাদুল হক।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের নামফলক এই উচ্চপর্যায়ের উপস্থিতি কোর্ট ভবনের গুরুত্ব ও ঐতিহাসিক দালিলিক প্রমাণ নির্দেশ করে। কিন্তু চার দশক পরও পুরো চত্বর সীমানাপ্রাচীরহীন অবস্থায় আছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জিসান আলী জানান, আমি উপজেলা কোয়ার্টারেই থাকি। দিনের বেলায় মানুষের চলাচল স্বাভাবিক। কিন্তু রাত গভীরে মানুষের চলাচলের আওয়াজ শোনা যায়। সীমানা প্রাচীর না থাকার কারণে চুরির উপদ্রব তো আছেই, এছাড়া আমার কাছে অভিযোগ আছে এটি মাদকসেবীদের নিরাপদ জায়গা হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, সীমানাপ্রাচীর থাকলে চত্বরের নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত করা যেত।

স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, রাতের বেলায় মোটরসাইকেল পার্কিং, অচেনা লোকজনের আনাগোনা এবং মাদকসেবীদের কার্যক্রম চত্বরকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী জাহিদুল হাসান জানিয়েছেন, আমি বিগত ৩০/০৯/২০২৫ তারিখে ৬০৫ নম্বর স্মারকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে রাজস্ব তহবিল থেকে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ বাবদ ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বরাদ্দ চেয়ে প্রাক্কলন প্রেরণ করেছি। তবে বাজেট অনুমোদন না হওয়ায় কাজ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। প্রস্তাব বহুবার পাঠানো হলেও এখনো অনুমোদন মেলেনি। আশা করি অচিরেই বাজেট অনুমোদিত হবে এবং নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা পরিষদ, কোর্ট ভবন, ইউএনও অফিসসহ সরকারি স্থাপনা এত বছর উন্মুক্ত থাকা উচিত নয়। রাতের অন্ধকারে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে এটি নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ।

আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকরা দাবি করছেন প্রশাসনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

তাড়াইল সরকারি মুক্তিযোদ্ধা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল বলেন, এত বড় সরকারি এলাকা উন্মুক্ত রাখা অযৌক্তিক। প্রাচীর থাকলে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বাড়ত।

নিরাপত্তাহীনতা, চুরি, মাদকসেবীদের চলাচল এবং অরক্ষিত প্রশাসনিক ভবনের কারণে চত্বরটি জনদুর্ভোগের জায়গায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা দ্রুত বাজেট অনুমোদনের মাধ্যমে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে প্রশাসনিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হোক।