ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

রাবির দ্বাদশ সমাবর্তন বর্জন, অনড় প্রশাসন

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাদের দাবি, সমাবর্তনের অতিথি ও সময় পুনঃবিবেচনা করে পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দিতে হবে।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল কবির ও ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ আলী।

এর আগে দুইবার সমাবর্তনের সময় পিছিয়ে গত ২২ অক্টোবর সমাবর্তনের নতুন তারিখ ঘোষণা হয় আগামী ১৭ ডিসেম্বর। সমাবর্তনে সভাপতি নির্ধারণ করা হয়েছে শিক্ষা উপদেষ্টা সি. আর. আবরারকে। এ ছাড়া অতিথি হিসেবে থাকার কথা পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ইউজিসি চেয়ারম্যান এ. এস. এম. ফায়েজের। অতিথিদের নাম ঘোষণার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাবেক শিক্ষার্থীরা। এই পরিপ্রেক্ষিতে তারা অতিথি ও সময় পুনঃবিবেচনা এবং রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে গত ৩০ নভেম্বর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। এতে তাদের দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় আজ সংবাদ সম্মেলনে তারা সমাবর্তন বর্জনের হুশিয়ারি দেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০, ৬১ ও ৬২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দ্বাদশ সমাবর্তনের আয়োজন করা হবে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এখন জাতীয় নির্বাচনের আগে আয়োজন করা হচ্ছে। গত ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মেইলে স্মারকলিপি পাঠিয়ে, অতিথি ও সময় পুনঃবিবেচনা এবং পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের সুযোগের আবেদন করেছি। কিন্তু তারা আমাদের দাবির বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

তারা বলেন, আমরা অতিথি নির্বাচন নিয়ে চরম অসন্তোষ ব্যক্ত করছি। কোনো অতিথিকে অসম্মান বা অশ্রদ্ধার জায়গা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ঐতিহ্যের কারণে আমরা এটি বিবেচনা করছি। আসন্ন নির্বাচনের আগে অতিথিদের পাওয়া না গেলে, নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানকে অতিথি করার ব্যাপারে আমরা আমাদের মতামত জানাচ্ছি।

এ ছাড়াও তারা সমাবর্তনের জন্য নেওয়া ফি কোন ব্যাংকে রাখা হয়েছিল, সেখান থেকে কত লভ্যাংশ পাওয়া গেছে এবং আমাদের পুরো সমাবর্তনের বাজেটের হিসেব প্রকাশ, ডিসেম্বর মাসের কর্মব্যস্ত সময়ের পরিবর্তে নতুন কোনো সময় বিবেচনা এবং রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের সুযোগের দাবি জানান।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তারা বলেন, ‘আমাদের সকলের আকাঙ্ক্ষা ছিল, আমরা সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টাকে দেখতে চাই। আমাদের সকলের আবেগ ও ভালোবাসার মানুষকে প্রশাসন কীভাবে ম্যানেজ করেছে, সেটি আমরা জানি না। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনি পৃথিবীর অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সেগুলোতে অনুপ্রেরণা হয়ে থেকেছেন। কিন্তু আপনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে ছোট করে দেখলেন কি না, অথবা আমরা বৈষম্যের শিকার হলাম কি না, সেটি আমরা জানি না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে এত বড় সমাবর্তনের সময় আপনাকে না পেয়ে আমরা হতাশ হয়েছি।’

প্রশাসনের উদ্দেশে হুশিয়ারি দিয়ে তারা বলেন, ‘আমরা এই সমাবর্তন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি প্রশাসন আমাদের উপেক্ষা করে সমাবর্তন আয়োজন করে, তবে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে প্রশাসনের উপর বর্তাবে। বিশেষ করে, যদি অতিথিদের সাথে অসম্মান করার ঘটনা ঘটে বা আমাদের অন্য কোনো প্রোগ্রামের মাধ্যমে সমাবর্তনে বিঘ্ন ঘটে, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী থাকবে।’

তবে সমাবর্তনের সময় অনড় থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমাবর্তনে আচার্য বা রাষ্ট্রপ্রধান নিজে থেকেছেন এমনটি নয়। এ বছরের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি শিক্ষা উপদেষ্টাকে মনোনিত করেছেন। আমাদের অতিথিদের আমন্ত্রণ, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধন ও ভেন্যু প্রস্ততির কাজ অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে এটাকে পুনঃবিবেচনার সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট সময়েই সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।’