বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অঙ্গনের জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিল খান তার অভিনয়জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন হিসেবে একই বছরে দুটি বড় সম্মাননা অর্জন করেছেন। তিনি পেয়েছেন সিজেএফবি জুরি অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ এবং বিসিআরএ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫-উভয় ক্ষেত্রেই ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ধারাবাহিকতা, পরিণত অভিনয় এবং বহুমাত্রিক চরিত্রে তার সাফল্য এই দুই পুরস্কারের মাধ্যমে পুনরায় স্বীকৃতি পেল।
চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে অনুষ্ঠিত হয় ২৪তম সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ডস। দেশের বিনোদন সাংবাদিকদের সংগঠন এটি। এই সংগঠন ১৯৯৯ সাল থেকে টেলিভিশন, ওটিটি, সংগীত ও চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রাখা শিল্পীদের সম্মান জানিয়ে আসছে।
এই আয়োজনে চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য শাকিল খানকে প্রদান করা হয় জুরি অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট অ্যাক্টর। তার অভিনীত চরিত্রের গভীরতা, মানবিক আবেগ প্রকাশের দক্ষতা এবং নতুন ধারার চরিত্রে নিজেকে বারবার প্রমাণ করাই ছিল জুরির সিদ্ধান্তের মূল কারণ।
পুরস্কার গ্রহণের পর তিনি বলেন, ‘প্রতিটি পুরস্কার আমাকে আরো কঠোর পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করে। দর্শকদের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।’
দ্বিতীয় পুরস্কারটি তিনি অর্জন করেন ৮ নভেম্বর ২০২৫। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কালচারাল রিপোটার্স এসোসিয়েশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সাফল্যের ধারাবাহিক স্বীকৃতি পান শাকিল খান। এক বছরের ব্যবধানে দুটি জাতীয় পর্যায়ের সম্মাননা একজন অভিনেতার ক্যারিয়ারে বিরল সাফল্য হিসেবে গণ্য হয়।
ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞরা মনে করছেন, তার অভিনয়ের মান, পরিশ্রম ও চরিত্রায়নের বৈচিত্র্যই তাকে নতুনভাবে আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে।
শাকিল খান। ১৯৯৭-এ যাত্রা, শুরুতেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে
শাকিল খানের চলচ্চিত্রে অভিষেক ১৯৯৭ সালে ‘আমার ঘর আমার বেহেস্ত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এরপর সেই যে পথ চলা। তিনি একে একে উপহার দেন বেশ কিছু জনপ্রিয় ছবি। এর মধ্যে রয়েছে বিয়ের ফুল, প্রাণের প্রিয়তমা, মানুষ মানুষের জন্য, কষ্ট, মনসহ আরও অনেক সিনেমা।
দর্শকদের মতে, তার অভিনয়ে ছিল স্বাভাবিকতা, চাপমুক্ত সংলাপ এবং বেদনা-বিষাদ-ভালোবাসার আবেগকে বাস্তবধর্মীভাবে উপস্থাপনের ক্ষমতা। যার ফলে তিনি অল্প সময়েই নির্মাতাদের প্রথম পছন্দে পরিণত হন।
দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কাজ করেছেন এই অভিনেতা। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি কাজ করেছেন ভারতীয় হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রেও।
তার অভিনীত আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-হার হার মহাদেব, রাজা রানী বাদশাহ, মেঘলা আকাশ।
বিশেষ করে নার্স আক্মেতার পরিচালিত মেঘলা আকাশ সীমান্ত-পেরিয়ে প্রশংসা কুড়ায়। যেখানে দুই দেশের শিল্পীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা গল্পে শাকিল খানের চরিত্র ছিল আবেগঘন ও প্রভাবশালী। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করায় শিল্প অঙ্গনের মধ্যেও তার এই উদ্যোগের প্রশংসা পাওয়া যায়। দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসায় মুখর হয়ে ওঠে শাকিল খান। মেঘলা আকাশসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে যেভাবে নিজের অভিনয়শৈলীকে সমৃদ্ধ করেছেন, তা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।
সমালোচকদের মতে, তার অভিনয়ে পরিণত আবেগের প্রকাশ বেড়েছে, চরিত্রের গভীরতা ফুটিয়ে তুলতে তিনি নতুন ধাঁচের প্রস্তুতি নেন এবং দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক দুই ফরম্যাটেই নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম তিনি।
নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা
ক্রমাগত দুটি পুরস্কার প্রমাণ করে যে, সময়ের সাথে নিজেকে বদলে নেওয়া এবং অভিনয়ে নতুনত্ব আনা শিল্পীর সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তরুণ শিল্পীদের জন্য তিনি হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা, যারা স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বহুদূর এগিয়ে নেওয়ার।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই দুই পুরস্কার শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা। যেখানে অভিজ্ঞ অভিনেতারা নতুন উদ্যমে আবারও সামনে আসছেন।

