ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

সোনাহাট স্থলবন্দর

১৪ দিন ধরে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি, বিপাকে ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ১১:০১ এএম
সোনাহাট স্থলবন্দর। ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম গত ১৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। ফলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে পাথরের দাম বৃদ্ধির কারণে (গত ১৩ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত) দীর্ঘ ১৪ দিন ধরে সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন।

স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দেশের ১৮তম স্থলবন্দর হিসেবে সোনাহাট স্থলবন্দরটির কার্যক্রম শুরু হয়। ১৪ দশমিক ৬৮ একর জমিতে স্থাপিত এই বন্দরে ৬০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ওয়্যারহাউস, প্রায় ২ লাখ বর্গফুটের পার্কিং ও স্টকইয়ার্ড, প্রশাসনিক ভবন ও শ্রমিক বিশ্রামাগার রয়েছে। চালুর পরপরই ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বন্দরটি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি হয়। অপরদিকে, গত ৪ মে থেকে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে গার্মেন্টস পোশাক, তুলা, প্লাস্টিক, মেলামাইন, আসবাবপত্র ও প্রসেসড ফুড পণ্য রপ্তানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়সহ সেভেন সিস্টারস অঞ্চলের রপ্তানি ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে পাথরের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় সোনাহাট স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফলে পাথর আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ রাখা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পাথরের দাম বাড়লেও বাংলাদেশে প্রতি টনে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত পাথরের দাম কমেছে। দীর্ঘ ১৪ দিন ধরে বন্দরে আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের অর্থ ও সময় অপচয় হচ্ছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

সোনাহাট স্থলবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান, মিজানুর রহমান ও নুর হোসেন রনি বলেন, ভারতের রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে পাথরের দাম বৃদ্ধি করায় গত ১৩ নভেম্বর থেকে আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ভারত থেকে সোনাহাট বন্দরে পাথর এনে প্রতি টনে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, আমরা দিন আনি দিন খাই। পাথরের দাম নিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে গত ১৪ দিন ধরে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমরা চরম বিপাকে পড়েছি।

সোনাহাট স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক এবং ব্যবসায়ী নেতা আবুল হোসেন বলেন, আমরা পাথরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। এই দামে না দিলে আমদানি বন্ধ থাকবে। অতিরিক্ত দামের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের দাবি মেনে নিলে আগামী রোববার বন্দরে পাথর আমদানি পুনরায় চালু হবে।

সোনাহাট স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন, ভারতের রপ্তানি ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা পাথরের দাম বাড়ানোর কারণে গত ১৩ নভেম্বর থেকে সোনাহাট স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা আলোচনা করছেন। আশা করছি দুই-তিন দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে।

সোনাহাট স্থলবন্দর সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, দু’দেশের আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্বের কারণে সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথর আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।