ঢাকা সোমবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৫

কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহতের ঘটনায় মামলা

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
নাগেশ্বরী থানা ।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা করেছে এক পক্ষ। অন্য পক্ষের মামলাও প্রক্রিয়াধীন। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে উপজেলার সন্তোষপুর ছিলাখানা হাইল্যাটারী গ্রাম।

রোববার (৩০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় ছিলাখানা হাইল্যাটারী গ্রামে বিরোধপূর্ণ ১৮ শতক জমির দখল নিয়ে সংঘর্ষ হয় আপন চাচাত-জেঠাতো ভাই মানিক উল্লাহ ও নুর মোহাম্মদ এবং জামাল উদ্দিনের ছেলে আলতাফ হোসেন ও আজিজার রহমানসহ তাদের লোকজনের মধ্যে।

এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মানিক উল্লাহর ছেলে এরশাদুল হক (৪২) এবং মানিক উল্লাহর বোন খাদে হোসেনের স্ত্রী কুলছুম বেগম (৫০)। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান জামাল উদ্দিনের ছেলে আলতাফ হোসেন (৫৫)।

আহত হন সফিকুল ইসলাম (৩২), মর্জিনা বেগম (৪২), আজিজার রহমান (৫৫), পারুল বেগম (৩২), মোফাজ্জল হোসেন (৩০), এরশাদের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা বেগম (৩৫)-সহ আরও বেশ কয়েকজন। তারা নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে আলতাফ হোসেনের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন (৩০) নাগেশ্বরী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে নিহত এরশাদুল হকের লোকজন পুলিশকে জানায়, তার ছুরিকাঘাতে মারা গেছে এরশাদুল। পরে তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনায় নিহত মানিক উল্লাহর জামাতা সিরাজুল ইসলাম রোববার রাতে মৃত আলতাফ হোসেনের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন (৩০), মোজাফ্ফর হোসেন (৩২), মোয়াজ্জেম হোসেন (২৬), ভাই আজিজার রহমান (৫৫), আজিজারের স্ত্রী পারুল বেগম (৩২), সফিকুল ইসলাম (৩২)-সহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাত ১০/১১ জনকে আসামি করে নাগেশ্বরী থানায় মামলা করেন। অপরপক্ষের মামলাও প্রক্রিয়াধীন।

স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক ও প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় এক বছর আগে জোনাব আলীর কাছ থেকে ১৮ শতক জমি যৌথভাবে কেনার জন্য টাকা দেন আপন চাচাত-জেঠাতো ভাই বছির উদ্দিনের ছেলে মানিক উল্লাহ ও নুর মোহাম্মদ এবং জামাল উদ্দিনের ছেলে আলতাফ হোসেন ও আজিজার রহমান। পরে দুই পক্ষই এককভাবে পুরো জমির দখল নিতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। কোনো পক্ষই নিজের অবস্থান থেকে সরে না আসায় জমির রেজিস্ট্রি হয়নি। 

তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে জমির মূল মালিক জোনাব আলী স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। তার তিন ছেলে—জাহান আলী, শাহজাহান আলী ও তৈয়ব আলী জমি রেজিস্ট্রি দিয়ে বারবার দায়মুক্ত হতে চাইলেও ক্রেতাদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। পরে জমিটি দখলে নেন বছির উদ্দিনের ছেলে মানিক উল্লাহ ও নুর মোহাম্মদ। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সলিশি বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় আলতাফ হোসেন ও আজিজার রহমান লোকজন নিয়ে দেশীয় অস্ত্র-লাঠি, সোডা, দা, ছুরি, বল্লম, লোহার রড নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমির দখল নিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে ঘটনাস্থলে ছুরিকাঘাতে মারা যান মানিক উল্লাহর ছেলে এরশাদুল হক (৪২) এবং পিটুনিতে মানিক উল্লাহর বোন খাদে হোসেনের স্ত্রী কুলছুম বেগম (৫০)। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান জামাল উদ্দিনের ছেলে আলতাফ হোসেন (৫৫)।

আহত হন সফিকুল ইসলাম (৩২), মর্জিনা বেগম (৪২), আজিজার রহমান (৫৫), পারুল বেগম (৩২), মোফাজ্জল হোসেন (৩০), এরশাদের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা বেগম (৩৫)-সহ আরও কয়েকজন।

সন্তোষপুর ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম জানান, মাত্র কয়েক শতক জমির জন্য ৩ জনের প্রাণ গেল, আরও বেশ কয়েকজন আহত। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি কখনো কাম্য নয়।

ঘটনার পর সরেজমিন তদন্তে যান কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার খন্দকার ফজলে রাব্বী। তিনি জানান, এ ঘটনায় নাগেশ্বরী থানায় একটি মামলা হয়েছে। অপরপক্ষের মামলাও প্রক্রিয়াধীন। একজনকে আটক করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।