নিজ বাড়ির সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় শতবর্ষী বৃদ্ধ আবু হাশেম ঢালি গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে তিনি শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে পাড়ি দেন।
অভিযোগ উঠেছে—তার ছোট ছেলে পুলিশের এসআই শাহ আলম সম্পত্তির লোভে বাবার স্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘হত্যা’ হিসেবে সাজিয়ে বড় ভাইয়ের স্ত্রী, ভাতিজা ও ভাতিজিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পাশাপাশি তিনি পুলিশের ‘প্রভাব’ খাটিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের মোল্লারহাট এলাকায় নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সেলিনা আক্তার।
এ সময় তার ছেলে সোহেল সামাদ রুবেল, শওকত আকবর, মেয়ে খোদেজা আক্তার, মেয়ে জামাই ফয়েজ আহমেদ, ননদ রাজিয়া বেগম ও পারভিন আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ১৬ জুন দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রায়পুরের হাজীমারা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ফারুক আহাম্মদ গত ৫ আগস্ট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে মামলার আসামি সোহেল সামাদ রুবেল, শওকত আকবর পারভেজ, খোদেজা আক্তার সুমি, সেলিনা আক্তার ও ফয়েজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, সড়ক দুর্ঘটনা আইনে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় অপর আসামি রাকিবের বিরুদ্ধে আদালতে বিচারের জন্য অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। বাকি পাঁচ আসামিকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফারুক আহাম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সেলিনা আক্তার বলেন, ‘আমার শ্বশুর আবু হাশেম ঢালি গত ১০ জুন সকালে মোল্লারহাট বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত হন। পরে তাকে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার আঘাতেই তিনি মারা যান। কিন্তু আমার দেবর শাহ আলম আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী একেএম সামছুল আলম মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের জমি-দোকানপাট দখল করে রেখেছে শাহ আলম। সম্পত্তি আত্মসাৎ করতেই আমাদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।’
সেলিনার ছেলে সোহেল সামাদ রুবেল বলেন, ‘মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত ও হয়রানি থেকে রেহাই পেতে আমরা পুলিশের আইজিপি, ডিআইজি ও কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তদন্ত শেষে কর্মকর্তা আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাননি এবং আদালতে তা লিখিতভাবে জানিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু শাহ আলম বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পুনরায় মামলাটি তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। বর্তমানে মামলাটি পিবিআই নোয়াখালীর তদন্তাধীন।’
মৃত আবু হাশেম ঢালির মেয়ে রাজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান। কিন্তু আমার ছোট ভাই সম্পত্তির জন্য একটি হত্যা মামলা করে আমার ভাবি ও ভাতিজাদের আসামি করেছে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কক্সবাজার জেলা পুলিশে কর্মরত এসআই মো. শাহ আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।




