লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের মুন্সিরবাজার থেকে তিস্তা নদীর দ্বীপচর মিনারবাজার যাওয়ার খেয়াঘাটে নৌকার ভাড়া বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ। এ অবস্থার প্রভাব পড়েছে চর থেকে আসা কালীগঞ্জ ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থীর ওপরও।
এর আগে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হালখাতা করে ভাড়া আদায় করা হলেও, এ বছর সরাসরি পারাপারের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে—যা শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রীদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও চরবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জেলা পরিষদের নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ইজারাদারদের সহায়তা করছেন। চর থেকে শহরে প্রয়োজনীয় কাজে যেতে হলে দুটো ঘাট পাড়ি দিতে হয়। বড়াইবাড়ি খেয়াঘাটে ৫০ টাকা এবং মিনারবাজার ঘাটে ৩০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এক মোটরসাইকেলের ভাড়া ৬০ টাকা, আর গরু-মহিষের গাড়ি পারাপারে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া চরে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। প্রতি বস্তা ধান বা ভুট্টা পরিবহনে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন মিনারবাজার ও মুন্সিরবাজার রুটে চলাচলকারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ চরবাসী।
চরের শিক্ষার্থীরা জানান, ‘চরে কেউ নতুন এলেই তার কাছ থেকে ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়। আবার কেউ অসুস্থ হলে, রাতবিরাতে শহরে গেলে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়। আমাদের দাবি, জেলা পরিষদের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা খেয়াঘাটে সাঁটিয়ে তা অনুযায়ী ভাড়া আদায় নিশ্চিত করা হোক।’
চরের কৃষক মোকছেদুল ইসলাম বলেন, ‘চর থেকে ধান, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল বাজারে নিতে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে গিয়ে আমরা লোকসানে পড়ছি।’
তিস্তার দ্বীপচরের বাসিন্দা রশিদুল ইসলাম জানান, তার তিন সন্তান কালীগঞ্জে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে। প্রতিদিন পারাপারের খরচ এবং শহরের যাতায়াতে বাড়তি খরচ বহন করতে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। ভাড়া না কমলে সন্তানদের আর শহরে পড়াতে পারবেন না।
কালীগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী লাবলু মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এই ইজারাদার চক্র চরবাসীকে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এবার সাহস করে তারা প্রতিবাদে নেমেছেন এবং পুলিশ ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ঘাট ইজারাদার আবু তালেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বছর বেশি টাকায় ঘাট ইজারা নেওয়া হয়েছে। আগের নিয়মেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মৃধা বলেন, ‘এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থী ও চরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি লাঘবে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’