শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম

কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে, প্রশ্ন তুহিনের বাবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ও তারা বাবা মো. হাসান জামাল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ও তারা বাবা মো. হাসান জামাল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। তার এমন মৃত্যুর খবরে পাগল প্রায় বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল ক্ষণে ক্ষণেই মূর্ছা যাচ্ছেন। 

আহাজারি করতে করতে তিনি বললেন, কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন‍্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো। আমি খুনিদের চাই না। তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ৬ নম্বর ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের মো. হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুন দম্পতির ছেলে। তুহিন পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। তার স্ত্রীর নাম মুক্তা আক্তার। তাদের সংসারে দুই ছেলে— বড় তৌকির (৭) ও ছোট ফাহিম (৩)।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে সাংবাদিক তুহিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিরা তাঁর গ্রামের বাড়ি ভাটিপাড়া আসতে শুরু করেন। শুক্রবার (৮ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে ভাটিপাড়া গ্রামে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

তুহিনের ৭৫ বছর বয়সী মা সাবিহা খাতুন। তিনি বুক চাপড়ে আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার ছেলে তুহিন কালকে (বুধবার) বলেছেন, ‘আমি তোমাকে আগামী মাসে চোখের ডাক্তার দেখাব। ডাক্তার অপারেশন করানোর কথা বললে, অপারেশন করাব। আম্মা, কোনো চিন্তা করো না। তুমি ভালো হয়ে যাবে।’

বোন সাইদা আক্তার রত্না বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমাদের খোঁজখবর নিত। আমার ভাই কোনোদিন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। কখনো খারাপ ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা দিত না। কেন আমার ভাইকে হত্যা করা হলো? আমার ভাইয়ের কী অপরাধ ছিল? আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে, তাদের ফাঁসি চাই।’ — এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

স্বজনদের বরাতে জানা যায়, আসাদুজ্জামান তুহিন ২০০৫ সালে ফুলবাড়িয়া আল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০২ সালে সিলেট এম. সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর গাজীপুর ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স করেন। 

পরে ভাই জসিম উদ্দিনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। কিছুদিন একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং পাশাপাশি ২০১২ সালে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে দেন। তবে ২০০৯ বা ২০১০ সালের দিকে হঠাৎ বড় ভাই জসিম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

বর্তমানে তুহিন ও তার অপর ভাই সেলিম গাজীপুরে বসবাস করতেন। সেলিম পরিবহন শ্রমিকের কাজ করেন। দ্বিতীয় ভাই জাহাঙ্গীর আলম পরিবার নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে বসবাস করেন এবং আরেক ভাই শাজাহান মিয়া সিলেটে থাকেন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা বসবাস করেন। তারা বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। ছেলেরাই তাদের দেখাশোনা করতেন।

গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বাদ জুমা তুহিনের প্রথম জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি আনা হবে। এরপর মাগরিব বাদ দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে গাজীপুর নগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করছিল। সাংবাদিক তুহিন সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করছিলেন। তখন তাকে ধাওয়া করে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলের একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সাংবাদিক তুহিনের সহকর্মী শামীম হোসেন বলেন, ‘চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন একদিক থেকে অন্যদিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ঠিক এমন সময় একজন নারী ও একজন পুরুষ আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যান। এমন সময় কয়েকজন লোক দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে, ‘এই পাইছি, তোরা আয়।’ ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তারা অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করেন। তখন তুহিন মোবাইল বের করে তাদের পেছনে দৌড় দেন।

তিনি আরও বলেন, ‘পরে আমি তুহিনকে খুঁজতে গেলে দেখি, অস্ত্রধারীরা হঠাৎ থেমে পেছনে তাকায়। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ে। ঠিক সেই মুহূর্তে ওরাও দোকানে ঢুকে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এরপর আমি পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোনো গাড়ি না পেয়ে বাসন থানার ওসিকে ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ আসে।’

ঘটনার পর রাতেই নিহত তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম ও আরেকজন বাদী হয়ে বাসন থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। বাসন থানার ওসি শাহীন খান বলেন, ‘আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অপরাধে জড়িত প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম-উত্তর) মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘আমাদের ধারণা, একজনকে মারধরের ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।’

Shera Lather
Link copied!