ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

বাড়ির পাশে সাংবাদিক তুহিনের দাফন সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের দাফন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের দাফন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার নিজ বাড়ির পাশে সামাজিক কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) মাগরিবের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে বাড়ির পাশে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বাদ জুমা তুহিনের প্রথম জানাজা শেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়েছিল।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, ‘মাগরিবের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে তুহিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এইভাবে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা একদম কাম্য নয়। তুহিনরা পাঁচ ভাই।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকেই কর্মসূত্রে সিলেট ও গাজীপুরে থাকেন। তারা কারও রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। তুহিন খুবই ভালো ছেলে ছিল। নিয়মিত বাবা-মায়ের খোঁজখবর নিতেন। তার মৃত্যুর কারণে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

একই এলাকার বাসিন্দা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘তুহিনরা পাঁচ ভাই খুবই ভাল ছেলে। সবাই কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে ছিলেন। আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে এলাকার অনেক মানুষকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। সবাই একই কথা বলবে, তুহিন খুব ভালো ছেলে ছিল। সত্যিই ভালো মানুষ বেশি দিন বাঁচে না।’

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের জানাজা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আক্রাম হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘তুহিন সাংবাদিকতায় খুব ভালো কাজ করেছিল। অল্প সময়েই সে বেশ নাম-ডাক অর্জন করেছিল। তাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তুহিনের আয়-রোজগার সবচেয়ে বেশি ছিল এবং পরিবারের দায়িত্বও সে পালন করতো। এখন তার স্ত্রী মুক্তা আক্তার দুই সন্তান নিয়ে বড় সমস্যায় পড়বেন। সরকার যদি সাহায্য দেয়, তাহলে খুবই ভালো হবে।’

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) রাত আটটার দিকে গাজীপুর নগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সন্ত্রাসীরা আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে। তারা দেশী অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করছিল, আর তুহিন সেই দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করছিলেন। তখন সন্ত্রাসীরা তাকে ধাওয়া করে কুপিয়ে হত্যা করে।

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ৬ নম্বর ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের মো. হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুন দম্পত্তির ছেলে। তিনি পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। তুহিনের স্ত্রী মুক্তা আক্তার, তাদের দুই ছেলে তৌকির (৭) ও ফাহিম (৩)।

সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সকালে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিরা তার গ্রামের বাড়িতে ভাটিপাড়া আসতে শুরু করেন।

তুহিনের ৭৫ বছর বয়সী মা সাবিহা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে তুহিন গতকাল (বুধবার) বলেছিল, আমি আগামী মাসে চোখের ডাক্তার দেখাবো। অপারেশন করাতে হবে বললে করাবো। মা, তুমি চিন্তা করো না, তুমি ভালো হয়ে যাবে।’ তার এমন কথা বলতে বলতে তিনি আহাজারি করছিলেন।

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ক্ষুণ্ণ বাবা মো. হাসান জামাল বলেন, ‘কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো? আমি খুনিদের চাই না, তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।’

বোন সাইদা আক্তার রত্না বলেন, ‘আমাদের ভাই কখনো কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না, কখনো খারাপ ছেলেদের সাথে মিশত না। কেন তাকে হত্যা করা হলো? আমি তাদের ফাঁসি চাই।’ এ কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তুহিন ২০০৫ সালে ফুলবাড়িয়া আল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০০২ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে গাজীপুর ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে ভাই জসিম উদ্দিনের ব্যবসার সাথে যুক্ত হন।

পরে ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি নেন। ২০১২ সালে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করে চাকরি ছেড়ে দেন। তার বড় ভাই জসিম ২০০৯ বা ২০১০ সালে ক্যান্সারে মারা যান।

বর্তমানে তুহিন ও এক ভাই সেলিম গাজীপুরে বসবাস করতেন। সেলিম পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। অন্য ভাই জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজার টেকনাফে পরিবার নিয়ে থাকেন, আর শাজাহান মিয়া সিলেটে থাকেন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বৃদ্ধ বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন এবং বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। ছেলেরা তাদের দেখভাল করতেন।