রবিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম

বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে মৃত্যু হয়, তবু হয় না সেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম

বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে মৃত্যু হয়, তবু হয় না সেতু। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে মৃত্যু হয়, তবু হয় না সেতু। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে মৃত্যু ও একাধিক দুর্ঘটনা ঘটলেও হচ্ছে না স্বায়ী কোনো সেতু। সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়।

সুত্র জানায়, উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কাকচর উত্তরপাড়া গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত পাগারিয়া নদীর ওপর তৈরি এই বাঁশের সাঁকো। রামপুর ও কাঁঠাল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই সাঁকো। বছরের পর বছর দুর্ঘটনা ঘটলেও এখনো নির্মিত হয়নি কোনো স্থায়ী সেতু। এই বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করেন কাকচর, দরিল্লা, কাঁঠাল, তেতুলিয়াপাড়া, বালিয়ারপাড় ও কানিহারী ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। প্রতিদিন জাহেদের ঘাট নামে পরিচিত এই জায়গায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়েই শিক্ষার্থীরা পার হয়ে পাশের কাঁঠাল ইউনিয়নের তেতুলিয়াপাড়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে।

প্রায় পাঁচ বছর আগে একই গ্রামের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী দুখুনি সাঁকো থেকে পা পিছলে নদীতে পড়ে মারা যায়। সাঁতার না জানায় পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে সে। দুখুনি ছিলেন ওই গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে।

ঘটনাটি স্মরণ করে গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আমিরুল হক বলেন, ‘স্কুলে যাওয়ার সময় এই বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে একটি শিশু মেয়ে মারা গেছে। এরপর ওই পরিবার গ্রাম ছেড়ে যায়। অনেক শিশু শিক্ষার্থী ওই সেতু থেকে পড়ে হা-পা ভেঙে পঙ্গু হয়ে গেছে। নেতাদের কত করে বললাম, একটা সেতু করে দিতে। কিন্তু সেতু করে দিল না। বাঁশের সাঁকো পারাপারের সময় মানুষ মরলেও প্রশাসনের টনক নড়ে না।’

বাঁশের সাঁকোর পাশেই নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফজাল হোসেনের বাড়ি। গত বছর স্কুল থেকে ফেরার পথে সাঁকো থেকে পড়ে তার হাত ভেঙে যায়। স্থানীয় কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসা করানোয় এখনো পুরোপুরি সেরে উঠেনি। আফজালের বাবা দুলাল মিয়া বলেন, ‘খালি আমার ছেলে না, প্রায়ই ছেলে-মেয়েরা পড়ে গিয়া হাত-পা ভাঙে। একটা সেতু হলে আর এমন কষ্ট করতে হতো না।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাঁশের সাঁকো দিয়ে রামপুর, কাঁঠাল ও কানিহারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। কৃষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ মালামাল নিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পার হন। নদীর একপাড়ের জমাজমি অন্যপাড়ে থাকায় ফসল আনা-নেওয়ার একমাত্র পথ এই সাঁকো।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাছে হওয়ায় আমরা স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন এই সাঁকো পার হই। মাঝেমধ্যে সাঁকো ভেঙে যায়, কিন্তু বিকল্প কোনো পথ নাই।’

কাকচর গ্রামের আজিজুল হক বলেন, গ্রামের চারটি ওয়ার্ডসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে আছেন। বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। অনেকবার অভিযোগ করেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় কৃষক মানিক মিয়া বলেন, ‘আমার দুই সন্তান প্রতিদিন এই সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যায়। বৃষ্টির সময় সাঁকো পিচ্ছিল হয়ে পড়ে, তখন আরও ভয় লাগে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আলিম উদ্দিন বলেন, এই সাঁকো দিয়ে কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। এখানে একটি কংক্রিটের সেতু খুব জরুরি। সাঁকো থেকে পড়ে এক শিশু মারা যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছে।

রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আপেল মাহমুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরে জানিয়েছি। তারা লোক পাঠিয়ে মাপজোখও করেছেন। কিন্তু কেন এখনো কাজ শুরু হয়নি তা জানি না। আমি শিগগিরই তাদের সঙ্গে আবারও কথা বলব।’

ত্রিশাল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, নদীর একপাশে রাস্তা থাকলেও অপর পাশে নেই। চেয়ারম্যানকে রাস্তা নির্মাণের জন্য বলা হয়েছে। রাস্তার ব্যবস্থা হলে সেতু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ত্রিশাল উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) যুবায়েত হোসেন বলেন, ‘এখানে আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত না। তবে এখানে যদি সেতু নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে জরিপ করা হয়ে থাকে। তবে অনুমোদন সাপেক্ষে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!