ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

আজ গৌরীপুর হানাদারমুক্ত দিবস

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:১১ পিএম
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আজ ৮ ডিসেম্বর। গৌরীপুর হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিকামী বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে গৌরীপুরকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেন। সেদিন গৌরীপুরের আকাশে ওড়ে লাল-সবুজের মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। রক্তঝরা ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছিল গৌরীপুরবাসী।

দেশকে স্বাধীন ও গৌরীপুরকে হানাদারমুক্ত করতে দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে শহীদ হন মতিউর রহমান, আনোয়ারুল হক, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল হাই, হাতেম আলী, আফাজ উদ্দিন, জসীম উদ্দিন, আনোয়ারুল ইসলাম মঞ্জু, সিরাজুল হক, আব্দুল মতিন ও সুধীর বড়ুয়া।

সেসময়ে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন গৌরীপুরবাসী। স্থানীয় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মরহুম হাতেম আলীর নেতৃত্বে গঠিত হয় সংগ্রাম পরিষদ। গৌরীপুর কলেজ ও রাজবাড়ীতে স্থাপন করা হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ছাত্র-যুবকরা এসব ক্যাম্পে এসে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।

২৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনী বিমান থেকে মেশিনগানের গুলি বর্ষণ এবং রেলপথে ভারী অস্ত্রের হামলা চালিয়ে গৌরীপুর শহর দখল করে নেয়। হানাদারদের ভারী অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে যান। শহর দখলের সময় কালীপুর মোড়ে স্কুলশিক্ষক নরেন্দ্র বিশ্বাসকে গুলি করে হত্যা করে হানাদাররা। পরে তাদের দোসরদের সহযোগিতায় শহরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়।

১৯৭১ সালের মে মাসে মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ফোরক দিয়ে গৌরীপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও রেলস্টেশন উড়িয়ে দেন, ফলে হানাদার বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। ৩০ নভেম্বর গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী পলাশকান্দা গ্রামে যুদ্ধে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা জসীম। আহত অবস্থায় ধরা পড়েন সিরাজ, মঞ্জু ও মতি। পরে তাদের ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে নিয়ে নির্মমভাবে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধাদের চোরাগোপ্তা হামলায় হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা গৌরীপুরকে হানাদারমুক্ত করতে চারদিক থেকে শহর ঘিরে ফেলেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী রাতের আঁধারে ময়মনসিংহে পালিয়ে যায়। রেখে যায় তাদের দোসর রাজাকার ও পুলিশ সদস্যদের। 

৮ ডিসেম্বর রাজাকার ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সেদিন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গৌরীপুর। মুক্তিযোদ্ধারা লাল-সবুজের মানচিত্রখচিত পতাকা হাতে নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন।

দিবসটি পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।