এক সময়ের মেঘনা নদীতে বয়ে যাওয়া পরিচিত সোনারগাঁয়ে হরিগঞ্জের শত বছরের পুরানো খালটি প্রভাবশালীদের কারণে খালের প্রায় ৮০ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে। এক কিলোমিটার এই খালটি বর্তমানে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। হরিগঞ্জ এই খালটি দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। এক সময় এই খালটি এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত, কিন্তু বর্তমানে এটি অবৈধ দখলদার এবং দূষণের শিকার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় এ খাল দিয়ে ট্রলার ও গয়নার নৌকাসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করলেও এখন অবৈধভাবে দখল করে মাটি ভরাট করায় নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অবৈধ দখলদারিত্বে এই জনপদের ঐতিহ্যবাহী খালটি এখন মৃতপ্রায়। এক সময়ের স্রোতস্বিনী খাল এখন প্রবাহ হারিয়ে পরিণত হয়েছে সরু নালায়।
খালের পাশের বাসিন্দাদের দখল ও দূষণের ফলে বৃষ্টির পানি নির্বিঘ্নে খালে পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। খাল উদ্ধারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি বলে দাবি করেন তারা।
জানা যায়, উপজেলার বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের হরিগঞ্জ গ্রামের পাশ দিয়ে মেঘনা নদীতে বয়ে যাওয়া খালটি দীর্ঘদিন ধরে মাটি ভরাট ও গাইড ওয়াল নির্মাণ করে দখলে নিয়ে নেয়।
খালটি দখলের ফলে আনন্দবাজার, দামোদরদী, দক্ষিণ দামোদরদী, হরিগঞ্জ, টেঙ্গারচর, বসনদরদী, পঞ্চবটি, উত্তর খংসারদী, বাগেরপাড়া, হামছাদী ঢাকারবনসহ প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন।
এ ছাড়াও মোগরাপাড়া থেকে বারদী সড়ক প্রশস্ত করায় ফ্রেশ এলপিজি গ্যাস সাপ্লাই কোম্পানির পাশের খাল দখল করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হরিগঞ্জ খালটি গড়ে ৩০ ফুট প্রস্থ ছিল। কোনো জায়গায় ২০, কোনো জায়গায় ২৫ ফুট ছিল। বর্তমানে খালটি মাত্র ৫ থেকে ৮ ফুট প্রস্থ রয়েছে। ব্রিজের পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ করে খাল দখল করেছেন বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সুমনের বাবা মোহাম্মদ হোসেন।
তার পাশ দিয়ে একে একে দখল করেছেন মনির হেসেন, মাওলানা সানাউল্লাহ নুরী, কামাল হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, সামসুল হক ভূইয়া, কবির হোসেন, ফয়েজ সরকার ও আল আমিন সরকার।
এদিকে কবির হোসেন পুরোনো স্টিল ব্রিজের পাশের গাইড ওয়াল দিয়ে মাটি ভরাট করে সিএনজি গ্যারেজ করা হয়েছে। এক কিলোমিটার খালে প্রায় ১৪ জন দখলদার খাল দখল করেছেন।
হরিগঞ্জ গ্রামের শাখাওয়াত হোসেন জানান, ঐতিহ্যবাহী খালটি ৪০০ বছরের। এ খালটি দখলের উৎসব চলছে। এ খাল দিয়ে এক সময় ট্রলার চলাচল করলেও এখন সেটা আর সম্ভব নয়। খালটি এখন সরু হয়ে গেছে। প্রশাসনও খাল দখলের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। একাধিকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চবটি গ্রামের শরিফ জানান, এ খালটি দখল হলে আশপাশের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হবেন। সরকারি সম্পত্তি প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চোখের সামনে দখল হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত খালটি দখলমুক্ত করা দরকার।
অভিযুক্ত কবির হোসেন জানান, তিনি খাল একা দখল করেননি। তবে তিনি সেখানে গাইড ওয়াল দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন, সেখানে কিছু অংশ দখল হতে পারে। তা ছাড়া তার পশ্চিম পাশে খাল পুরোপুরি দখল হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মঞ্জুরুল মোর্শেদ জানান, সরকারি খাল কোনোভাবেই দখল করতে দেওয়া হবে না। সরেজমিনে গিয়ে খাল দখলের প্রমাণ পেলে দখলদারদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন