ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

নাটোর-১ আসনে মানুষের অধিকার আদায়ে নতুন করে ভাবছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০৫:৩০ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নাটোর-১ আসনে রাজনৈতিক মাঠ সরগরম। লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন। নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার পর দুই উপজেলার হাটবাজার থেকে চায়ের দোকান সবখানেই চলছে ভোটের আলোচনা।

দুই পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত আসনটিতে ভোটার ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯২ জন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে ও ২০২৪ সালে ডামি ভোটের কারণে গত তিনটি নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এখানকার সাধারণ ভোটাররা। তাই এবার নির্বাচন নিয়ে তারা বেশ উৎফুল্ল। দীর্ঘদিন পর ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন তারা। আর মানুষের অধিকার আদায়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরাও।

১৯৯১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত আসনটি ধরে রাখে বিএনপি। এবার আসনটি পুনরুদ্ধারে দলটি বেশ জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। পতিত আওয়ামী লীগ না থাকায় বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। এদিকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে চারজন মাঠে সক্রিয়। তারা গণসংযোগ করছেন, মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, মানুষের কষ্টের কথা শুনছেন এবং মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলছেন। 

তারা হলেন: বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত নারী আসন-৪১) সৈয়দা আসিয়া আশরাফী পাপিয়া, প্রয়াত যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের ছেলে ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন এবং মেয়ে ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুল। দলীয় মনোনয়ন পেলে তারা সকলেই আসনটি বিএনপিকে উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

অপরদিকে, লালপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রচারণায় আছেন জেলা সদস্য সচিব এএসএম মোকাররেবুর রহমান নাসিম। এ ছাড়া খেলাফত মজলিস থেকে ড. আজাবুল হক প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনকেন্দ্রিক ভাবনাগুলো জানতে কথা বলেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক  অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনের ৪৩ বছর দলের প্রতি অনুগত থেকেছি। আওয়ামী রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গত ১৭ বছর দল ও নেতাকর্মীদের দুর্দিনে পাশে থেকেছি। এখন এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভালোবাসা ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক ভাবমূর্তি আমার মূল শক্তি। দল সুযোগ দিলে এ আসনকে উন্নয়নের রোল মডেল বানাতে চাই।’

সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিয়া আশরাফী পাপিয়া রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে একসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী করেছি। এখন জন্মভূমি নাটোর-১ আসনের ভাগ্য উন্নয়নে মনোনয়ন চাই। শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নয়নে বদ্ধপরিকর।’ তিনি বিশ্বাস করেন, দলের প্রতি নিবেদন ও আনুগত্যের কারণে দল তাকে মনোনয়ন দেবে।

প্রয়াত যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের ছেলে জেলা বিএনপির সদস্য ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন বলেন, ‘দলীয় সকল দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে ইনশাআল্লাহ।’ তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং বিজয়ী হয়ে এ অঞ্চলে কৃষির উন্নয়ন, নতুন প্রজন্মের চাহিদা পূরণ ও তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবেন।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর ২০১৬ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় আছি। দলের দেওয়া প্রতিটি দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। নারী প্রার্থী হিসেবে স্বচ্ছ ও ইতিবাচক রাজনৈতিক ভাবমূর্তি রয়েছে। এ কারণে দল আমাকে অগ্রাধিকার দেবে। এ অঞ্চলের উন্নয়নে নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানে বিশেষ নজর দেব।’

লালপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দুর্নীতি ও চাঁদাবাজমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জামায়াত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনগণের হক ও স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন করতে চাই।’

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির জেলা সদস্য সচিব এএসএম মোকাররেবুর রহমান নাসিম জানান, ‘বিজয়ী হয়ে কাজের মাধ্যমে উন্নয়ন দেখাতে চাই। ভোটারদেরকে প্রতীক দেখে নয়, প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে ভোট দিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ ছাড়া খেলাফত মজলিস থেকে ড. আজাবুল হক প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে গণঅধিকার পরিষদ, এনসিপি ও অন্যান্য দলের প্রচারণায় কাউকে দেখা যায়নি। নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে কারও নাম শোনা যায়নি।