ঢাকা বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

মাধ্যমিকের ছাত্র হয়েও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বিএনপি নেতার ছেলে

নেত্রকোণা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
শিক্ষার্থী মুনতাছিনের পঞ্চমশ্রেণি পাসের প্রত্যয়ন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় এক মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় শিক্ষা মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ওই শিক্ষার্থীর নাম মাশরুর শারার মুনতাছিন (১২)। সে বারহাট্টা উপজেলার সাহতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। গত বছর সে ময়মনসিংহ ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেই বিদ্যালয় থেকেই প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে সাহতা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে নিয়মিতভাবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ক্লাস করছে এবং ডিসেম্বর মাসে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও মুনতাছিনকে এখনও ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হচ্ছে এবং তাকে চলতি বছরের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বৃত্তি পরীক্ষার মডেল টেস্টে সে অংশ নেয় কদলদেউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সেন্টারে। ওই সেন্টারের হাজিরা খাতায় তার নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সেন্টারের হল সুপার ও কুমারপাড়া হিলোচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মামুন মিয়া।

এ ছাড়া, গত এক বছর ধরে মুনতাছিন ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উপবৃত্তিও গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।

তথ্যানুসারে, মুনতাছিনের বাবা মো. মাজু মিয়া বারহাট্তা উপজেলার সাহতা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং দত্তগ্রামের বাসিন্দা। ছেলে সাহতা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সদস্যও হয়েছেন।

স্থানীয় শিক্ষক সমাজের অভিযোগ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এই অনিয়মে জড়িত থাকতে পারেন।

তাদের দাবি, একজন মাধ্যমিক শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া কেবল অনৈতিক নয়, এটি শিক্ষা প্রশাসনের প্রতি চরম অবমাননা।

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষার্থী মুনতাছিনের বাবা মাজু মিয়ার মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সাহতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ মজিবুর রহমান বলেন, মুনতাছিন বর্তমানে আমাদের বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির নিয়মিত ছাত্র। তার রোল নম্বর ৪৪। সে গত বছর ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে।

ময়মনসিংহ ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল মিয়ার ফোনও একাধিকবার চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়া যায়।

হল সুপার মো. মামুন মিয়া বলেন, মুনতাছিন নামের ওই ছাত্র বৃত্তি পরীক্ষার মডেল টেস্টে অংশ নিয়েছে, এটি সত্য। বিষয়টি জানার পর আমাদের একজন শিক্ষক সব প্রমাণপত্র উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছেন। আমিও এ ব্যাপারে শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জিয়াউর রহমান বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া স্পষ্ট অনিয়ম। এ বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আজম বলেন, ঘটনা তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।