গ্রামীন মেলা, এই শব্দটি শুনলেই মনের অজান্তেই পুলকিত হয় হৃদয়। কখন আসবে সেই মাহিন্দ্রক্ষন দিনটি সেই অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয়না, বিশেষ করে গ্রামের শিশু কিশোর সহ যুবক বৃদ্ধবণিতাও বাদ যায় না এই অপেক্ষা থেকে, কারন বছরের এই দিনটিতে পরিচিত অপরিচিত মানুষ গুলোর মিলন মেলায় একত্রিত হয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে।
নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী ঘাট তিলকপুরের জামাই মেলা প্রায় শত বছর থেকে পালিত হয়ে আসছে। নওগাঁ সদর উপজেলার তুলশী গঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে ঘাট তিলকপুর ছোট গ্রামীণ হাট,এই হাটেই বসে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা। ঘাট তিলকপুর হাটের নামানুসারেই এই মেলার নাম ঘাট তিলকপুর মেলা নামেই পরিচিত। বর্তমান এই নদীর উপর সেতু হওয়াই দুপারের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে যা অতীতে খেঁয়া ঘাটে পারাপারের কারনে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে অতীতে খেঁয়া ঘাট থাকার কারনেই মূলত ঘাট শব্দটি যুক্ত হয়ে ঘাট তিলকপুর নাম হয়।
এই মেলার মুল আকর্ষণ প্রতিযোগিতা করে গরুর গোস্ত এবং বড় মাছ কেনা। বিশেষ করে নতুন জামাইদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। সেই সাথে অতীত থেকে প্রচলিত আছে জামাইরা মেলাই যাওয়ার পূর্বে শ্বশুর শ্বাশুরী সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা হাতে ধরিয়ে দেয় এবং জামাই ও ছোট শালক শালিকা থাকলে তাদেরকেও টাকা দিতে হয়। জামাই মেয়ে মেলা শেষে বিদায় বেলা নতুন কাপড় দেওয়ার প্রথা আজও প্রচলিত আছে। মেলা উপলক্ষে বাবার বাড়িতে নাঙরে আসা মেয়েরা এ বাড়ি ও বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া বন্ধু বান্ধবীদের সাথে খোঁসগল্পে মেতে উঠার আনন্দ যেন ভিন্ন মাত্রায় মনকে প্রশান্ত করে দেয়।
মেলায় নাগরদোলা, মোটরসাইকেল খেলা পিচবোর্টে চড়ে নদীতে ঘোরাঘুরি করা শিশু কিশোরদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। মেলায় ঘুরতে আসা ছোট্ট বালক সাবিত বলে, মেলা আমার খুব ভালো লাগে, আমি মেলায় বাঁশি, বেলুন ও খেলনা ট্রাক কিনেছি আর বাবার সাথে নাগরদোলায় চড়ে খুব আনন্দ পেয়েছি।
আগের সময় একদিনেই মেলা শুরু এবং শেষ হতো কিন্তু ধীরে ধীরে বর্তমান সময়ে মেলা শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত মোটামুটি পাঁচ দিন চলে। মেলাই জিলাপির দোকান কসমেটিক, লোহার আসবাবপত্র মাটির হাড়ি পাতিলের দোকানসহ নানা ধরনের ছোট বড় পসরা চোখে পরার মতো। আরেকটি খাবার এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ। অঞ্চল ভেদে এই খাবারকে কেউ বলে হুড়ুম আবার কেউ বলে কানমুড়ি তবে এই এলাকায় কানমুড়ি নামেই বেশী পরিচিত। এই মেলাকে কেন্দ্র করে প্রায় পনের দিন পূর্ব থেকে প্রতিটি পরিবারে নারিকেলের নাড়ু চালের আটা তৈরি সাথে খৈই মুড়ি ভাঁজার ধুম পরে যায়।
এই মেলা কখন কিভাবে শুরু হয় এমন তথ্য জানতে চাইলে সত্বর উর্ধ্বো আফজাল শাহ্ দৈনিক রুপালী বাংলাদেশকে বলেন, ঠিক কবে থেকে এই মেলা শুরু হয় আমার জানা নেই তবে আমার বাবা দাদা তারাও বলতে পারেনা কবে থেকে শুরু হয়েছে তবে দেখে আসতেছি দুর্গাপূজার দশমীর পরের দিন বা শনিবার, মঙ্গলবার হাটবারের দিন এই মেলা বসে।
স্হানীয় আরেক বাসিন্দা এনাম হক বলেন, আমাদের এখানে কোন পূজা মন্ডপ নেই তবে দশমীর পরের দিনই এই মেলা বসে, এই মেলাকে কেন্দ্র করে আসেপাশের এলাকাজুড়ে যেন আনন্দের ঢেউ নামে, জামাই মেয়ে সহ কোন না কোন আত্মীয় স্বজন প্রায় প্রতিটি পরিবারেই আসে।
ঘাট তিলক পুর মেলা আদিকাল হতে হাটের স্থানে বসলেও জায়গার স্বল্পতার কারণে প্রায় তিনশত গজ উওরে আরেকটি মেলা একই সাথে বসে। বেলা বারার সাথে সাথে মানুষের ঢলও বেড়ে যায় গভীর রাত্রি পর্যন্ত কেনাকাটা চলে বিশেষ করে বিকেল বেলা যেন পা রাখার ঠাঁই থাকেনা।
মেলা কমিটির একজন সদস্য হাবিবুর রহমান হবি দৈনিক রুপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের এই মেলা অতীতকাল থেকে হয়ে আসছে আমরা ও ধরে রেখেছি তবে আগের তুলনায় এখন মানুষ বেশী হয় নিরাপত্তার জন্য গ্রাম প্রতিরক্ষার সদস্য সহ মেলা কমিটির সবাই জোরদার ভাবে নজরদারিতে রাখা হয়। তবে আশাবাদী কোন সমস্যা হবেনা।
আপনার মতামত লিখুন :