বান্দরবানের বাসস্ট্যান্ড থেকে হাফেজঘোনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে যাওয়ার পথে নির্মিত টানেলটি জনগণের দূর্ভোগ নিরসনে নির্মাণ হলেও খোদ টানেলটি জনদূর্ভোগে পরিণত হয়েছে বর্তমানে। উদ্বোধনের এক বছর ১০ মাসের মধ্যে টানেলের বিভিন্ন অংশে ঝরনার মতো পানি পড়ছে।
বিগত সরকারের আমলে টানেলটি নির্মাণ হয়। এটি বান্দরবান উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়ন ও তদারকির দায়িত্বের সুযোগে নির্বাহী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের যোগসাজশে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ স্থানীয় ঠিকাদারদের।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত টানেলটি নির্মাণের শুরু থেকেই প্রকৌশলীদের মোটা অঙ্কের টাকায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে গেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার রাজু বড়ূয়া। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হলেও তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার মর্জিতে কাজ করত ঠিকাদার। কমিশনের কারণে ঠিকাদারের অনিয়মে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করত উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান জেলা প্রকৌশলী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানেলের বিভিন্ন অংশে পানি পড়ার ফলে রাস্তায় কাদা ও স্যাঁতস্যাতে হয়ে আছে। টানেলের ওপর পাহাড়ের মাটি পানির সাথে মিশে টানেলের প্রবেশ করলে কাদা-মাটি জমে আছে টানেল ও রাস্তার ওপর। তবে বৃষ্টির দিনে ফাটা অংশ দিয়ে প্রচুর বৃষ্টির পানি আসে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলেন, টানেলটি কোনো উপকারেই আসেনি জনগণের। বীর বাহাদুরকে খুশি করতে মূলত উন্নয়ন বোর্ড এই টানেল নির্মাণ করেছে এবং বীর বাহাদুরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রাজু বড়ূয়াকে কাজ দিয়েছে। রড থেকে শুরু করে বালি সবকিছুতে ছিল অনিয়ম এবং নিয়ম না মানার প্রবণতা। ২৩ সালে অক্টোবরে উদ্বোধন হয় টানেলটি। কিছুদিন যেতে না যেতে টানেলের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিরসনের নামে লুটপাট প্রকল্প হিসেবে এই কাজ করেছে উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদার মিলে, যার ফলে এটি টেকসই উন্নয়ন হয়নি।
উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বান্দরবান ইউনিট কয়েক ধাপে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ১১ কোটি টাকায় ৫০০ ফুটের এ টানেলটি নির্মাণ করা হয়। গত ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর টানেল উদ্বোধন করেন তৎকালীন পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও আলী হোসেন জানান, বিলাসী প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্নীতি করার জন্য এই টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। তৎকালীন সময়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর একদিকে নিজের লোক দিয়ে নামে-বেনামে প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে টাকা লুটপাট করেছেন। একইসাথে প্রতি প্রকল্পের নামে কমিশনের অংশ বাড়াতে অপ্রয়োজনীয় জনদূর্ভোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে সমর্থন দিয়েছেন। নিজে লুটপাটে মোটাতাজা হয়েছেন, সহযোগীদেরকেও মোটাতাজা করেছেন। এই টানেলের স্থায়ীয়ত্ব ও মালামাল পরীক্ষা করলেই অনিয়মের পর্দা ফাঁস হয়ে যাবে। শুধু ঠিকাদার নয়, এই টানেলের অনিয়মে উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীও দায়ী। পিসি বানিজ্যে (ঘুষ) এই প্রকৌশলী সেরা। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বীর বাহাদুরের নাম বিক্রি করেছেন এই প্রকৌশলী, বর্তমানে উপদেষ্টার নাম বিক্রি করছেন।
তারা আরও জানান, টানেলটি গাড়ি পার্কিং ছাড়া আর কোনো উপকারে আসেনি। এ ছাড়া এ বর্ষা মৌসুমে টানেলের বিভিন্ন অংশে পানি পড়েছে। টানেলের ওপরে মাটি ধসে পড়ার ফলে টানেলটির টেকসই নিয়ে সন্দিহান। এ ছাড়া টানেলটির ওপরের অংশে পাহাড় থেকে মাটি ধসে টানেলের ছাদে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইয়াসির আরাফাত দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘টানেলের ছাদের ওপরে পানি নিষ্কাশনের জন্য যে পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়েছিল, সেই পাইপ লাইনগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে। তাই টানেলের ছাদ থেকে পানি পড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টানেলের বৈদ্যুতিক তারও চুরি হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে নতুন বৈদ্যুতিক তার লাগিয়ে নতুনভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কাজে অনিয়ম ও তদারকিতে কোনো গাফলতি হয়নি।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন