তিন বছর পর প্রবাস থেকে দেশে ফিরছিলেন বাহার উদ্দিন। তাকে স্বাগত জানাতে ঢাকা গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সেই আনন্দঘন মুহূর্ত পরিণত হয় শোকে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে গেলে প্রাণ হারান একই পরিবারের ৭ জন।
বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুরে ফেরার পথে পূর্ব চন্দ্রগঞ্জের জগদীশপুর এলাকায় মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি খালে পড়ে যায়।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মো. মোবারক হোসেন ভূঁইয়া জানান, কয়েকজন যাত্রী খাল থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও বাকিরা ভেতরে আটকা পড়ে মারা যান।
নিহতরা হলেন- প্রবাসী বাহার উদ্দিনের নানী ফয়েজ্জুনেছা (৮০), মা মোরশিদা বেগম (৫৫) স্ত্রী কবিতা বেগম (২৪) ভাবি লাবনী বেগম (৩০), ভাতিজি রেশমি আক্তার (৮) ও লামিয়া আক্তার এবং মেয়ে মীম আক্তার।
দুর্ঘটনায় বেঁচে ফিরেছেন বাহার উদ্দিন, তার বাবা আব্দুর রহীম, ভাই ও আরেক শিশু।
নিহতদের স্বজন ও দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা প্রবাসী বাহার উদ্দিনের বাবা আব্দুর রহীম জানান, চালক বারবার ঘুমে ঢুলছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা একাধিকবার বলেছিলাম—তুমি গাড়ি থামাও, ঘুমাও। কিন্তু সে বারবার বলছিল—সমস্যা নাই, আমি চালাতে পারব। কয়েকবার রাস্তার মাঝেই গাড়ি কাঁপছিল, টের পাচ্ছিলাম সে ঘুমিয়ে পড়ছে।’
‘চৌমুহনী এবং বাংলাবাজার পেরোনোর পরও তাকে বিশ্রাম নিতে বলা হয়। কিন্তু চালক কথায় কান না দিয়ে চালিয়ে যেতে থাকেন।
অবশেষে, এক পর্যায়ে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়।’-যোগ করেন তিনি।
এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ।
এর আগে সকালে চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ওমান থেকে ফেরা প্রবাসী বাহার উদ্দিনকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ঢাকা বিমানবন্দর থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মাইক্রোবাসটি পূর্ব চন্দ্রগঞ্জের গজদীশপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৭ জনের মৃত্যু হয়।’
স্থানীয়রা দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে এসে মরদেহগুলো উদ্ধার করে। পরে নোয়াখালীর বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক সবাইকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি মোবারক হোসেন ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চালকের ঘুমের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে চালক পলাতক রয়েছে। দুর্ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। মরদেহগুলো আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।’