ঢাকা বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫

বৃদ্ধের চুল-দাড়ি কেটে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১০:২৪ পিএম
আটক মজনু মিয়া মজনু মিয়া। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দকে হেনস্থা করে তার চুল ও দাড়ি কেটে দেওয়ার ঘটনায় মজনু মিয়া (৪৭) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মজনু মিয়া উপজেলার কাশিগঞ্জ এলাকার মৃত রজব তালুকদারের ছেলে।

তারাকান্দা থানার ওসি টিপু সুলতান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মজনু মিয়া এজাহারনামীয় আসামি। তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়েছে।’

এর আগে, শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে হালিম উদ্দিন আকন্দের ছেলে মো. শহীদ আকন্দ বাদী হয়ে তারাকান্দা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

হেনস্থার শিকার বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দ জানান, “ঘটনার দিন আমি বাজারে গেলে তারা জোর করে ধরে আমার চুল ও দাড়ি কেটে দেয়। বাজারে তখন লোক কম ছিল। আমি চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাইনি। তখন আমি শুধু আল্লাহকে বলেছিলাম, ‘আল্লাহ, তুই দেখিস’। এখনো আল্লাহর কাছেই বিচার চাই।”

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের কথায় থানায় অভিযোগ করেছি। দেখি তারা কী বিচার করে। চুল-দাড়ি কাটার সময় বাইরের দুজন লোকসহ মোট ৮-৯ জন ছিল। তাদের মধ্যে এলাকার নয়ন ও মজনুও ছিল। তারা এখনও এলাকায় আছে এবং আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমার সম্মান ক্ষুণ্ন করেছে—আমি এর বিচার চাই।’

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হালিম উদ্দিন ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামটি ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের পাশে অবস্থিত। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে ‘হালিম ফকির’ নামে চেনেন। তিনি একেবারেই গরিব মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, হালিম উদ্দিন কোনো মানসিক রোগী বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তি নন। তিনি হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ পরান (র.)-এর ভক্ত। প্রায় ৩৭ বছর আগে মাজার জিয়ারত করতে গিয়ে তিনি নিজের বেশভূষা পরিবর্তন করেন। তখন থেকেই তিনি চুল ও দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন এবং কবিরাজি করতেন।

গ্রামবাসীর মতে, হালিম উদ্দিন এলাকার একজন পরিচিত মুখ, তার চলাফেরা ও আচরণ ছিল স্বাভাবিক মানুষের মতোই। তার বিরুদ্ধে আগে কখনো কোনো অভিযোগ ছিল না।

তবে কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে একদল ব্যক্তি তার চুল, দাড়ি ও মাথার জট জোরপূর্বক কেটে দেয়। তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি।

ঘটনার পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ ওই ঘটনা নিয়ে কথা বললে তার কণ্ঠে ফুটে ওঠে রাগ, কষ্ট আর ক্ষোভ। স্থানীয়দের ভাষায়, আগের মতো আর স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন না তিনি।

এদিকে, ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, অসহায়ভাবে তিনি বলছেন, ‘আল্লাহ, তুই দেখিস’—যা এখন প্রতিবাদের ভাষায় রূপ নিয়েছে।

প্রতিবেশীরা জানান, হালিম উদ্দিন একজন পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক। তিনি আগে কৃষিকাজ করতেন। পরবর্তীতে ফকিরি জীবনে এসে কবিরাজি করতে শুরু করেন। ৩৭ বছরের মাথার জট একদিনে কেটে ফেলার ঘটনায় সমাজে যে চরম অবমাননার শিকার হয়েছেন, তার বিচার দাবি করেছেন স্থানীয়রা।