জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘শিক্ষাখাতে বরাদ্দ পর্যায়ক্রমে কেন কমছে?’ তিনি বলেন, দেশে ১১টি কমিশন গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়নি।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর টাউন হল মিলনায়তনে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. কামরুল আহসান বলেন, ‘শিক্ষাখাতে চলতি বছরে জিডিপির মাত্র ১.৫৩ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এমনকি আফগানিস্তানের মতো একটি দেশেও এই খাতে ৪ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে। আমাদের চারপাশের দেশগুলোতেও শিক্ষায় জিডিপির ৩ শতাংশের ওপরে ব্যয় হয়। সেই তুলনায় বাংলাদেশে এই বরাদ্দ হতাশাজনক।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সেই দেশে মানুষ স্বপ্ন দেখবে কীভাবে? বড় হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে কীভাবে?’
তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি তদারকি কমিটি করা হলেও তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সময়ের সাথে সাথে শিক্ষাখাতে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার ও বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে।
বেকারত্ব প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১২.৩ শতাংশ। দেশে প্রায় ৪০ লাখ বেকার, যাদের বড় অংশই উচ্চশিক্ষিত এবং অনেকেই জিপিএ-৫ প্রাপ্ত।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয়, তাদের অধিকাংশই জিপিএ-৫ পেয়ে আসে। অথচ পরবর্তীতে তারা চাকরি পাচ্ছে না—এটা পাঠ্যক্রম ও দক্ষতা ব্যবস্থার ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়।’
পাঠ্যক্রম সংস্কারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিশ্বজুড়েই নিয়মিত পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করা হয়। আমাদের দেশেও সেটা হওয়া উচিত।’
২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘সে সময় উপাচার্য ও ইমাম পালিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা ব্যর্থতা নিয়েই সামনে এগোচ্ছি। আইনপ্রণেতা ও দায়িত্বশীলরা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। এমন দেশে তরুণরা কীভাবে নেতৃত্ব দেবে সেটাই ভাবার বিষয়।’
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ ও মতিউর রহমান প্রসঙ্গ টেনে উপাচার্য বলেন, ‘তারা মেধার দিক থেকে অতুলনীয় হলেও নৈতিকতার জায়গায় প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা যদি মেধাভিত্তিক সমাজ গড়তে চাই, তবে নৈতিকতা ছাড়া তা সম্ভব নয়। শুধু জিপিএ-৫ নয়, নৈতিকভাবে আলোকিত মানুষ তৈরি করাই এখন সময়ের দাবি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আর রক্ত ঝরাতে চাই না। এমন এক সমাজ চাই, যেখানে বেনজীর-মতিউরের মতো বিতর্কিত চরিত্রগুলো আর জন্মাবে না।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মঞ্জুরুর রহমান, জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুন নেছা খন্দকার, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান হাসিব, বাফুফের সহসভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি এবং মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ এইচ এম অলি উল্লাহ প্রমুখ।