পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় জোর করে মন্দিরের জায়গা দখলের চেষ্টায় বাধা দিতে গিয়ে নারীসহ দুইজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাতের দিকে উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের ঠাকুরের হাট এলাকায় ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের ঠাকুরের হাট বাজারে সনাতন ধর্মালম্বীদের পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়। ঐ জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ বিষয়ে পটুয়াখালী দায়রা জজ আদালতে মামলা চলছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মন্দিরের নামে জায়গা দখলের জন্য দীপঙ্কর মন্ডল, ভব সিকদার, নিত্য ভক্ত, অমল মন্ডল, কল্যাণ অধিকারীসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জন বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করেন। খবর পেয়ে রানী বালা ও তার দেবরের ছেলে বাধা দিলে তাদের মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে দশমিনা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।
আহত রানী বালা বলেন, ‘ঐ মন্দিরের জন্য আমরা ২০০ শতাংশ জমি দান করেছি। ঐ জমির ওপর মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের সামনে আমার শেষ সম্বল হিসাবে কিছু জমি আছে। ঐ জায়গা দখল করার জন্য দীপঙ্কর মন্ডল, ভব সিকদার, অমল মন্ডল, জালাল মেলকার ও মানিক বিশ্বাসসহ কয়েকজন দীর্ঘদিন চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের সব জমি বিক্রি করে ঐ জায়গা রক্ষা করছি। বৃহস্পতিবার পূজা শেষ হওয়ার আগেই রাতের সময়ে জায়গা দখলের জন্য বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়। আমি বাধা দিলে আমাকে মারধর করে আহত করা হয়। পরে দশমিনা থানা পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।’
রনজিৎ হাওলাদার জানান, ‘জমি নিয়ে পটুয়াখালী জজ আদালতে মামলা চলমান। দশমিনা থানায় অভিযোগ দেওয়া আছে। পূজা শেষে থানার নির্দেশে উভয় পক্ষকে কোনো কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাদের কথা অমান্য করে বৃহস্পতিবার রাতে পসারি রানী, জালাল মেলকার ও মানিক বিশ্বাসের নির্দেশে নিত্য ভক্ত, কল্যাণ অধিকারী, ভব সিকদার, অমল মন্ডলসহ ১০-১২ জন কাজ করে। আমার ছেলে ও ভাইয়ের বউ বাধা দেয়। পরে তাদের মারধর করে আহত করে আটকে রাখা হয়। পরে দশমিনা থানা পুলিশ এসে আমাদের রক্ষা করেন এবং রানী বালা ও আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান। মন্দির করার জন্য জমি দেওয়ার পরও বাকি জায়গা দখলের চেষ্টা চলছে। আমি উপজেলা প্রশাসনের কাছে দোষীদের বিচার দাবি করি।’
বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুব খান জানান, ‘মন্দিরের জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছে। রনজিৎ হাওলাদার মন্দিরের জন্য জমি দিয়েছেন। তারপরও কিছু লোক তার সামান্য একখণ্ড জমি দখল করার জন্য একের পর এক মারধর করছে, যা ন্যক্কারজনক। দুর্বল মানুষের জন্য আইন কি নেই? পসারি রানীর নির্দেশে এসব হচ্ছে। এই ঘটনায় মন্দিরের অনেক মূর্তি ছিল। যদি ক্ষতি হতো, তার দায় কে নিত? এরা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এর সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের বিচার হওয়া প্রয়োজন।’
ঘটনার বিষয় জানতে পসারি রানীসহ নিত্য ভক্ত, ভব সিকদার, অমল মন্ডল ও কল্যাণ অধিকারীর কাছে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো কথা বলার জন্য রাজি হননি।
দশমিনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলিম জানান, ‘ঘটনার বিষয় শুনে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। আহত রানী বালা ও তার দেবরের ছেলেকে দশমিনা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন