ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫

কোটি টাকার আবহাওয়া অফিস যেন ‘আবাসিক হোটেল’

পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম
সরকারি অফিসে নেই কাজ, আছে শুধু খাট ও কাপড়। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রথম শ্রেণির নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রটি আজ যেন ‘আবাসিক হোটেল’। দীর্ঘ এক যুগ ধরে প্রয়োজনীয় জনবল ও কার্যক্রম না থাকায় এ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানটি পড়ে আছে প্রায় অচল অবস্থায়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অফিস কক্ষে বসার টেবিলের জায়গায় খাট ও বিছানা, বাইরে রাখা সরকারি আসবাবপত্র, রান্নার আয়োজন ও জামা-কাপড় শুকানোর ব্যবস্থায় বোঝা যায় এটি এখন যেন বসবাসের জায়গা হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে গণপূর্ত বিভাগ প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে আবহাওয়া অফিসটির নির্মাণকাজ শুরু করে। মূল ভবনের কাজ শেষ হয় ২০১২ সালে এবং অফিসটি হস্তান্তর করা হয় ২০১৬ সালে।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৮ সালে কিছু সীমিত জনবল নিয়োগ পেলেও তারা নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকেন না। পরবর্তীতে নিয়োগ পাওয়া আনসার সদস্যরাও অনিয়মিত।

সূত্র থেকে জানা যায়, অফিসটির মূল ফটকে তালা ঝুলছে। পাশের একটি গেট দিয়ে প্রবেশ করে দেখা যায়- অফিসে নেই কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী। নেই কোনো কার্যক্রম।

বিভিন্ন যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। আর অফিস কক্ষের ভেতরে টানা দড়িতে শুকানো হচ্ছে কাপড়, চলছে রান্নাবান্নাও।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘সাত-আট বছর ধরে আমরা এই অফিসটি দেখছি। কখনো মূল গেট খোলা দেখিনি। মাঝে মাঝে দু’একজন আনসার সদস্যকে দেখা যায়, কিন্তু কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই।’

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন যাতায়াত করি, কিন্তু কখনো কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। অথচ পিরোজপুরের একমাত্র আবহাওয়া অফিস এটি।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী সোয়াইব সিদ্দিক বলেন, ‘পিরোজপুর একটি উপকূলীয় ও নদীবেষ্টিত জেলা। এমন গুরুত্বপূর্ণ অফিস থেকে আমরা কোনো উপকার পাচ্ছি না। অবিলম্বে এটির পূর্ণ কার্যক্রম শুরু হওয়া প্রয়োজন।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজেদুল হক।

তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ নভেম্বর থেকে আমি এখানে যোগদানের পর নিয়মিত অফিস করছি। যেসব যন্ত্রপাতি আছে সেগুলোর ডেটা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে কিছু যন্ত্রে যান্ত্রিক ত্রুটি আছে, সেগুলোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

অফিস কক্ষে বিছানা পেতে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম থাকে, রাতের ডিউটির জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরে কিছু নয়।’