পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির আটঘর-কুড়িয়ানার এলাকায় পেয়ারা হাটে ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শতবছর আগে বাংলার আপেল খ্যাত এই পেয়ারা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে উপজেলার ২৫টি গ্রামে ৬ শত ৭ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৭০টি পরিবার পেয়ারা চাষে যুক্ত। এছাড়া এলাকার প্রায় ১০ হাজার শ্রমজীবী মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই চাষের সাথে জীবন-যাপন করছেন।
কুড়িয়ানা, আটঘর, আদমকাঠি, জিন্দাকাঠি, ধলহার ও আতা এলাকায় অন্তত ১০ খালে প্রতিদিন ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। প্রতিবছর আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই বাগান ও হাটে বিপুল ভিড় দেখা যায়। এ বছর বৃষ্টির অভাবে ফলন কিছুটা কম হলেও প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৯ টন পেয়ারা ফলেছে। হাটে প্রতি মন পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা সরাসরি হাজার হাজার মন পেয়ারা ক্রয় করে লঞ্চ, ট্রাক ও পিকআপে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও প্রতিদিন শত শত মন পেয়ারা দেশজুড়ে সরবরাহ করেন। তবে সড়ক পথে নানা ধরনের ভয়ভীতি ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে।
পর্যটকদের জন্য এলাকায় কয়েকটি মিনি পার্ক এবং ভাসমান পেয়ারা পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। পার্কে রয়েছে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য রাইড, ওয়াচ টাওয়ার, চা-কফি সপ ও খাবারের সুবিধা। জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৩০ টাকা।
স্থানীয় প্রশাসন উচ্চশব্দে সাউন্ডবক্স বাজানো, অশ্লীল আচরণ ও আবর্জনা ফেলার মতো আচরণ নিষিদ্ধ করেছে। ইতিমধ্যে কিছু অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, ফলে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।
ফ্লোটিং পেয়ারা পার্ক ও পিকনিক স্পটের মালিক অতনু হালদার তনু জানান, পেয়ারা বাগানে আসা পর্যটকদের বিনোদন ও বিশ্রাম দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের বেকারত্ব দূর করার লক্ষে তারা ওই পর্যটনকেন্দ্রগুলো গড়ে তুলেছেন। এখানে আগুন্তক পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা বিধানে তারা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রেখেছেন।

ঢাকা থেকে পার্কে ঘুরতে আসা মিলি দাস গুপ্ত জানান, টিভি এবং ইউটিউবের মাধ্যমে জায়গাটা সম্পর্কে জেনেছি। শহরের কোলাহল থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করেতে পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে এখানে ঘুরতে এসেছি। মনোমুগ্ধকর এই এলাকায় একই সাথে পেয়ারার বাগান, ভাসমান বাজার ও পার্কের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে পর্যটকদের জন্য রেস্ট হাউজ এবং পার্ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
পর্যটক ও স্থানীয়দের মতে, সরকারিভাবে সমন্বয় ও বিনিয়োগ হলে কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান হতে পারে একটি সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র এবং দেশের জন্য আয়মূলক স্থল।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন