‘প্রায় ৪৯ বছর আগে পদ্মা নদীতে পানির নায্য হিস্যা পেতে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত লংমার্চ করেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। এখনও সেই সংকটের সমাধান হয়নি। তাই পানির অধিকারের দাবিতে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে পায়ে হেঁটে আবার লংমার্চ হবে। ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে এভাবেই আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
মাওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বর্ষপুর্তি উপলক্ষে শনিবার (২৪ মে) বিকেলে রাজশাহীতে আয়োজিত গণজমায়েত ও সমাবেশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। রাজশাহীর ৪৯তম ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উদযাপন কমিটি নগরের সাহেববাজার বড়মসজিদ প্রাঙ্গনে এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম. রফিকুল ইসলাম। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। বক্তব্য রাখেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সভাপতিত্ব করেন ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ড্যাবের রাজশাহীর সভাপতি ডা. মো. ওয়াসিম হোসেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘ভারত ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধন করে। এই ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের জন্য একটি মরণ ফাঁদ উপলব্ধির পর মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠ থেকে ফারাক্কা লংমার্চ শুরু করেন। ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বছর অতিবাহিত হলেও ভারত বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। পানির ন্যায্য অধিকারের আশ্বাসের কথা বললেও আজ পর্যন্ত তাদের কোনো আশ্বাস বাস্তবায়ন বাংলাদেশের মানুষ এখন পর্যন্ত দেখতে পায়নি। বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের প্রায় ৪৪টি অভিন্ন নদী আজ বিলুপ্তির পথে। পানির কারণে নদীগুলো মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।’
তারা আরও বলেন, ‘ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হলে প্রয়োজনে মাওলানা ভাসানীর মতো নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে একটা চুক্তি করেছিল যা ভারতের পক্ষে। হাসিনা সরকার ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে ভারতকে একতরফা পানি ব্যবহার করতে দিয়েছে।’
বক্তারা বলেন, ‘এই ফারাক্কার পানি চুক্তি নিয়ে আর কোন অপরাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না। এটা দেশের মানুষের বাঁচা-মরার বিষয়। এই অবস্থায় পানির অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ আওয়াজ তুলতে শুরু করেছেন।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও ভাষানী ফাউন্ডেশন, রাজশাহীর সভাপতি ড. জি.এম. শফিউর রহমান। বক্তব্য রাখেন, নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের রাজশাহীর সভাপতি এনামুল হক, নিরাপদ সড়ক চাই-এর রাজশাহীর সভাপতি তৌফিক আহসান টিটু, রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জমসেদ আলী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জেলার সমন্বয়ক আবুল হাসনাত বেগ প্রমুখ।