বৃত্তির ফলাফল জালিয়াতির ঘটনায় রাজশাহীতে ১০ বছর পর এক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই শিক্ষা কর্মকর্তার নাম রাখী চক্রবর্তী।
রাজশাহীতে ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলায় রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়।
গত ২ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে এ আদেশ জারি করা হয়। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক মামলা চলছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ আদেশ পৌঁছেছে।
আদেশে বলা হয়েছে, রাখী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে রুজু করা বিভাগীয় মামলায় করা অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪ (৩) (গ) মোতাবেক ‘চাকরি থেকে অপসারণ’ নামীয় গুরুদণ্ড দেওয়া হলো। একই সঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হলো।
এর আগে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও ৩ (ঘ) অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর বিভাগীয় মামলা করা হয়। এ বিষয়ে তার দেওয়া জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে এ গুরুদণ্ড দেওয়া হয়।
বিভাগীয় মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নম্বর ফর্দ এবং সমাপনী পরীক্ষার গোপনীয় কাগজপত্র ও কম্পিউটার তৎকালীন বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীর কক্ষে তার নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল। নম্বর টেম্পারিংয়ের কাজটি তৃতীয় কারও পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাখী চক্রবর্তীর নামে দুদকের পৃথক মামলা আদালতে বিচারাধীন। এ কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে রাখী চক্রবর্তী কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বোয়ালিয়া থানার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪০ জন শিক্ষার্থীর খাতায় প্রাপ্ত নম্বরের চেয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে কম্পিউটারে ফলাফল প্রস্তুত করে বেশি নম্বর দেওয়া হয়। এ নিয়ে অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
এরপর রাজশাহীতে এসে এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সাইফুল ইসলাম তদন্ত করেন। সেই বছর ১৭ জুলাই মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। সেই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে বিভাগীয় মামলা হয়। তাদের মধ্যে তৎকালীন বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হলো।