ঢাকা শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজশাহীতে টানা বর্ষণে ড্রাগন চাষিরা বড় লোকসানে

জনাব আলী, রাজশাহী
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম
রাজশাহী অঞ্চলে টানা বর্ষণের কারণে লোকসানে পড়েছেন ড্রাগন চাষিরা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী অঞ্চলে টানা বর্ষণের কারণে এবার ড্রাগন ফলের আকার ছোট। ফলে বাজারে এর দাম ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এতে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ড্রাগন চাষ করা কৃষকরা ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বর্তমানে বাগান থেকে ড্রাগন ফল প্রতি কেজি মাত্র ১১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, যা উৎপাদন খরচও পূরণ করতে পারছে না।

বিগত কয়েক বছরে লাভজনক ফসল হিসেবে রাজশাহীর গোদাগাড়ি, তানোর, পবাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপকভাবে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। আগে চাষিরা ভালো মুনাফা করেছেন, কিন্তু এবার অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বিপর্যস্ত হচ্ছেন তারা।

গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের চয়তুনপুর জামাইপাড়ায় ১৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করে আসছেন রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তার বাগানে প্রচুর ফল এসেছে, তবে টানা বর্ষণের কারণে ফলের সাইজ ছোট হওয়ায় বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন না তিনি।

ড্রাগন ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বাগান তৈরির তার, সার, বিদ্যুৎ বিল ও শ্রমিকের খরচও বেড়ে গেছে। প্রতিদিন ১৪-১৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন বাগানে, তাদের খরচ বহন করতেই ব্যয় বাড়ছে।

গত কয়েক বছরে ড্রাগন ফল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। কিন্তু এবার ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কখনো আবার কম দামে ভ্যানে ফেরি করে বিক্রি করতে হয়।

তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ফল বেশি এসেছে, কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে দ্রুত পেকে পচে যাচ্ছে। ফলের সাইজ ছোট হওয়ায় দাম কম পাওয়া সত্ত্বেও পচে যাওয়ার ভয়ে দ্রুত বাজারজাত করতে হচ্ছে, যা উৎপাদন খরচ মেটানো কঠিন করে তুলেছে।’

রাকিব আরও জানান, তিনি ১৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ৪০ হাজার চারা রোপণ করেছেন। তিন বছর ধরে ড্রাগন চাষ করছেন, এবার ফলন ভালো এসেছে, কিন্তু দাম না পাওয়ায় লোকসান হবে। এই প্রকল্পে প্রায় ৯০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হলেও এ বছর মাত্র ৪ লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে।

পবা উপজেলার ডাংগীপাড়া গ্রামের ড্রাগন চাষি এরশাদ আলী জানান, ১০ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। গত বছর ২০ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছিল এবং লাভ হয়েছে, কিন্তু এবার বৃষ্টির কারণে ফলন কম এবং দামও কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে ড্রাগন চাষ ব্যাপক হয়েছে। তবে এবার বৃষ্টির কারণে ফল ছোট হলেও মোট উৎপাদন ভালো হয়েছে। খাওয়ার উপকরণের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ফলের দাম কমে যাওয়া চাষিদের উদ্বেগের কারণ। তবে বর্ষা শেষ হলে ড্রাগনের দাম বাড়বে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।’