বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিমাঞ্চল) রাজশাহীর সাবেক ও বর্তমান ১৮ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পণ্য ক্রয়ে বাজার দরের তুলনায় ১৫ থেকে ৩৩ গুণ বেশি মূল্য দেখিয়ে ২ কোটি ১৮ লাখ টাকারও বেশি সরকারি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মেলায় এই মামলা দায়ের করা হয়।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বাদী হয়ে রাজশাহীর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (সজকো) মামলাটি (মামলা নম্বর-০১) দায়ের করেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের কন্ট্রোলার অব স্টোরস (সিওএস) দপ্তরের মাধ্যমে তালা, বালতি, বাঁশি, ঝাণ্ডা, ভিআইপি পর্দা, লাগেজ ফিতা, ওয়াগন কার্ড, চেয়ার, ট্রলি-সহ ১৭ প্রকার পণ্য ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ঘটে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ত্রিমাত্রিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব পণ্য ক্রয়ে বাজার যাচাই না করেই অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য নির্ধারণ করা হয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব ক্রয়ে মোট ২ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ১৯৬ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি তালা ক্রয়ে ঠিকাদারকে দেওয়া হয় ৫ হাজার ৫৯০ টাকা, যেখানে প্রকৃত বাজারদর ছিল মাত্র ১৭৩ টাকা। শুধুমাত্র তালা ক্রয়েই ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৪০০ টাকা অনিয়ম হয়েছে। একইভাবে ভিআইপি পর্দা ক্রয়ে ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা এবং অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ে ১ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
দুদকের মামলায় সাবেক মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) খোন্দকার শহিদুল ইসলাম ও মো. মজিবুর রহমান, সাবেক সিওএস (পশ্চিম) মো. খায়রুল আলম ও মো. বেলাল হোসেন সরকারসহ মোট ১৮ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান বিভিন্ন পর্যায়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক, অর্থ কর্মকর্তা (ডিএফএ) এবং হিসাব ও অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাক্কলন ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ৩৩ গুণ বেশি দরে ক্রয়ের পক্ষে সুপারিশ করেছিলেন। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মামলাটি দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন।