মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে অপহৃত কিশোরী রীমা রানী সরকার (১৫)-কে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত ভিকটিমের খালা শিল্পী সরকার ওরফে শিল্পী বেগম (৩০) এবং তার স্বামী মোবারক মিয়াকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজার সপ্তমীর দিনে শ্রীমঙ্গল শহরের আর কে মিশন রোডের দুর্গামন্দিরে অঞ্জলি দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয় কিশোরী রীমা রানী সরকার। পরদিন রীমার পিতা মতিলাল বিশ্বাস বাদী হয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার কাঠালকান্দি গ্রামের বদরুল আলম (২৫) সহ তিনজনের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৭/৩০ ধারায় মামলা রুজু করা হয়।
অপহরণের ঘটনার পরই শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ তদন্ত ও অভিযান শুরু করে। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ একাধিক অভিযান পরিচালনা করে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৮ ও ১১ অক্টোবর মামলার এজাহারনামীয় দুই আসামি বদরুল আলম ও শহিদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিমের অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় তদন্ত আরও জোরদার করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ভিকটিমের খালা প্রিয়াংকা সরকারের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে তার কল রেকর্ড বিশ্লেষণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া যায়।
এতে জানা যায়, সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর এলাকায় শিল্পী সরকার ওরফে শিল্পী বেগম এবং তার স্বামী মোবারক মিয়া রীমা রানী সরকারকে তাদের ভাড়া বাসায় আটক করে রেখেছে। তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে, শিল্পী সরকার (ওরফে শিল্পী বেগম) ভিকটিমের আপন খালা। প্রায় দুই বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে তিনি মোবারক মিয়াকে বিয়ে করেন এবং পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত হন। ঘটনার দিন তিনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মন্দিরসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে অঞ্জলি শেষে ফেরার পথে কিশোরী রীমাকে প্রলোভন দেখিয়ে সিলেটের ধরাধরপুরে নিয়ে যান। এরপর পরিবারের সঙ্গে ভিকটিমের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
ঘটনার পর রীমার মা যখন তার বোন শিল্পী সরকারের কাছে মেয়ের খোঁজ জানতে চান, তখন তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। অবশেষে, ২৪ অক্টোবর তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় পরিচালিত বিশেষ অভিযানে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ কিশোরী রীমা রানী সরকারকে উদ্ধার এবং শিল্পী সরকার ও তার স্বামী মোবারক মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে মেডিকেল পরীক্ষা ও আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

