ঢাকা সোমবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫

রাজশাহী মুসলিম স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধ

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম
স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. একরামুল হকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক অনিয়ম ও নারী সহকর্মীর প্রতি অশালীন আচরণের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে নগরীর হেতেমখাঁ এলাকায় বিদ্যালয়ের সামনে এ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষককে স্কুলে অবরুদ্ধ করে তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।

এর আগে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় তারা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে—অবিলম্বে প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বহিষ্কার, নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন, আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত আনা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে স্থায়ী বহিষ্কার ও আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা।

স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সহকারী শিক্ষক তরিকুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক একরামুল হক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের অর্থ লেনদেনে অনিয়ম, কোচিং বাণিজ্যে প্রতারণা ও শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়সহ নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষার্থীদের ফি, পুকুর লিজের পাওনা ও অন্যান্য খাত থেকে আদায়কৃত টাকার মধ্যে দুই লাখ টাকারও বেশি অর্থ তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজের হাতে রাখেন। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটিও ওই অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে।

এ ছাড়া নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এক সহকারী শিক্ষকের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া এবং বিদ্যালয়ের সম্পদ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত আয় করার অভিযোগও তোলা হয়। কোচিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে প্রতারণা করার কথাও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

শিক্ষকরা আরও জানান, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের ক্রয় কমিটিকে পাশ কাটিয়ে নিজের ইচ্ছামতো পণ্য কিনে বিল জালিয়াতি করেন। এমনকি নিজের ব্যবহারের জন্য দুটি চেয়ার কিনে ৩২ হাজার টাকার ভুয়া বিল তৈরি করেন।

অভিযোগের আরেকটি দিক হলো, নারী সহকর্মীর প্রতি অশালীন আচরণ। সংবাদ সম্মেলনে সহকারী শিক্ষক সোহানা শারমিন অভিযোগ করেন, দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন তুললে প্রধান শিক্ষক তার প্রতি আপত্তিকর ও নোংরা মন্তব্য করেন, যা যৌন হয়রানির শামিল। এ নিয়ে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে অভিযোগ দাখিল করা হলেও এখনো কোনো তদন্ত হয়নি বলে তিনি জানান।

এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। তিনি সরকারি অনুমতি ছাড়া অন্য একটি বিদ্যালয়ে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং রাজনৈতিক পদে প্রার্থী হতে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন, যা চাকরির আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়।

তরিকুল ইসলাম বলেন, বারবার অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবে।

অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হক সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটি চক্র ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল ও বিদ্যালয়ের সুশৃঙ্খল পরিবেশ নষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সকল আর্থিক লেনদেন নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং প্রতিটি টাকার হিসাব বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবেই রাখা আছে। কোনো অর্থ আত্মসাৎ বা অনিয়মের প্রশ্নই আসে না। অডিট কমিটি বা ম্যানেজিং কমিটির কেউ এমন কোনো প্রমাণ পায়নি।’