ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

প্রভাবশালীদের মৌখিক নির্দেশে ‘একঘরে’ ৩ পরিবার

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম
‘একঘরে‍‍’ তিন পরিবার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মিঠাপুকুরে একঘরে করা হয়েছে ৩ পরিবারের সদস্যদের। এর ফলে ২ শিক্ষার্থী ১৮ দিন ধরে স্কুলে যেতে পারছে না। পরিবারের আরও ৭ সদস্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়াও হামলা ও মারপিটের ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ওই ৩ পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের গিরাই পানাতিপাড়া গ্রামে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই গ্রামের মৃত আব্দুর রফিক মিয়া ও তার দুই ছেলের পরিবারকে একঘরে করে রেখেছেন গ্রামবাসীর একাংশ। তারা ওই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। মুলত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তাদের। ইতিপূর্বে তাদের ওপর হামলা ও মারপিট চালানো হয়েছিল।

নানা অজুহাতে তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলে একঘরে হওয়া পরিবারের কর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান। তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিবেশীদের সাথে জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জের ছিল। তারই সূত্র ধরে তারা আমাদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন করছেন। প্রায় ১৭ দিন হলো সমাজের একাংশের মানুষ আমাদের একঘরে করে রেখেছে। আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। তারা রাস্তায় মারপিট ও হামলা করে। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না।’

আরেক পরিবারের কর্তা আলমগীর মিয়া বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তারা অনেক মানুষ। হামলা ও মারপিট করে।’

স্থানীয় গিরাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে লামিয়া আক্তার সেবিন। তার পরিবারকে একঘরে করার কারণে সে ১৮ দিন ধরে বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। তার ছোট ভাই আর রাইয়ান তামিমও ওই বিদ্যালয়ের প্লে শ্রেণিতে পড়ত। কিন্তু একঘরে করার কারণে তারা কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। লামিয়া আক্তার সেবিন বলে, ‘আমি স্কুলে যেতে পারছি না। রাস্তা দিয়ে গেলে তারা মারপিট করে। ভয়ে বাড়ির বাহিরে বের হতে পারছি না। আমি স্কুলে যেতে চাই।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জরিনা বেগম (৫৫) বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে মানুষ কম। তারা হামলা-মারপিট করে, রাস্তায় বের হতে দেয় না। ছেলেরা কাজকর্ম করতে পারছে না। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ৩ পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে প্রতিবেশী কয়েকটি পরিবারের। এ ঘটনায় একাধিকবার হামলা, মারপিট ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি গিরাই গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী মৌখিকভাবে ওই ৩ পরিবারকে একঘরে করে রেখেছেন।

প্রভাবশালীর একজন গিরাই বাজার জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসা মিয়া বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিবেশীরা আমাদের মসজিদে অভিযোগ দিল যে, সে তালাক দেওয়া স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করছে। আমরা মসজিদের তিনজন মানুষ বিষয়টি তদন্ত করলাম। আসলে ঘটনাটি সঠিক নয়। আমরা তাকে (জাহাঙ্গীর) মসজিদে ডাকলাম। সে বলল, সে রাস্তা দিয়ে বের হতে পারছে না। প্রতিবেশীরা মারপিট করে। আমরা তাকে বাড়ি হতে নিয়ে এসে আবার বাড়িতে রেখে আসতে চাইলাম। তারপরও ভয়ে সে ৫ জুমা মসজিদে আসেনি। এ কারণে সমাজের লোকেরা তাদের ৩ পরিবারকে একঘরে করে রেখেছে।’

আরেক প্রভাবশালী আলমগীর মিয়া বলেন, প্রতিবেশীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকজন তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তারা ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না বলেছেন। কমিটির লোকজন তাদের মসজিদে ডেকে এসেছিলেন। কিন্তু তারা ৫ জুমা মসজিদে আসেননি। এ কারণে সমাজের লোকজন তাদের একঘরে করে রেখেছেন।

ওই ৩ পরিবারের বিরুদ্ধে মসজিদে অভিযোগকারী প্রতিবেশীদের মধ্যে জুয়েল রানা, রুস্তম আলী, আব্দুর রউফসহ কয়েকটি পরিবার রয়েছে। তারা জাহাঙ্গীর আলমসহ ৩ পরিবারকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। কয়েকদফা হামলা ও মারপিটেরও ঘটনা ঘটিয়েছে। জাহাঙ্গীর আলমকে ফাঁসাতে তারা মসজিদে শালিস দিয়েছিল বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গ্রামবাসী জানান।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, ঘটনাটি জানি না। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।