ঢাকা শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

শরীয়তপুরে নবজাতকের মৃত্যু, অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের মূল হোতা গ্রেপ্তার

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম
গ্রেপ্তারকৃত সবুজ দেওয়ান। ছবি- সংগৃহীত

শরীয়তপুরে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার কারণে এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় মূল হোতা সবুজ দেওয়ানকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। শনিবার (১৬ আগস্ট) ভোরে সদর উপজেলার বেড়া চিকন্দী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত সবুজ দেওয়ান সদর উপজেলার ধানুকা এলাকার আবু তাহের দেওয়ানের ছেলে। শুক্রবার রাতে নিহত শিশুর বাবা নূর হোসেন সরদার পালং মডেল থানায় সবুজ দেওয়ানসহ পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার, রোগীর স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের ছাতিয়ানী এলাকার নূর হোসেন সরদারের স্ত্রী রুমা বেগম বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে শরীয়তপুর শহরের নিউ মেট্রো ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর শিশুটির শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেদিন রাতেই নূর হোসেন পাঁচ হাজার টাকায় ঢাকাগামী একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন।

কিন্তু পথে চৌরঙ্গী মোড়ে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সচালক সবুজ দেওয়ান ও তার বাবা আবু তাহের দেওয়ানসহ কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে দেন। তারা অভিযোগ তুলে বলেন, স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স থাকতে কেন ঢাকার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হলো। এ সময় তারা চালক মোশারফ মিয়ার কাছ থেকে জোরপূর্বক গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেন এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। প্রায় ৪০ মিনিট তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তির পর অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর প্রচণ্ড গরম ও অক্সিজেনের অভাবে নবজাতকটি মারা যায়।

নিহত শিশুর বাবা নূর হোসেন সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ছেলেকে আমি চোখের সামনে হারিয়েছি। স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সচালকরা সাত হাজার টাকা দাবি করেছিল, কিন্তু আমরা গরিব মানুষ, তাই কম খরচে ঢাকার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছিলাম। তাদের সিন্ডিকেটের কারণে আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। আমি জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।

অ্যাম্বুলেন্স চালক মোশারফ মিয়া বলেন, আমি ঢাকা থেকে একজন রোগী নিয়ে শরীয়তপুরে এসেছিলাম। ফিরতি ট্রিপে পাঁচ হাজার টাকায় শিশুটিকে ঢাকা নেওয়ার জন্য ভাড়া করা হয়। গাড়ি স্টার্ট করার সঙ্গে সঙ্গে সবুজ দেওয়ান ও তার সহযোগীরা আমাকে বাধা দেয়, চাবি কেড়ে নেয় এবং মারধর করে। তাদের কারণে শিশুটি গাড়িতেই মারা গেছে।

র‍্যাব-৮ এর কোম্পানি কমান্ডার ও পুলিশ সুপার মীর মনির হোসেন বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পর আমরা তাৎক্ষণিক অভিযান শুরু করি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে সবুজ দেওয়ানকে গ্রেফতার করে পালং মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান।

পালং মডেল থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সবুজ দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে, জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।