সিলেট এমসি এন্ড গভর্নমেন্ট কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ ইনক’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘স্কলারশিপ প্রোগ্রাম ২০২৬’ উপলক্ষে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম আহমদ খান শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে অ্যালামনাইদের ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে উচ্চশিক্ষার পথ শুধুমাত্র মেধার ওপর নির্ভর করে না; আর্থিক সচ্ছলতা, সামাজিক সহায়তা এবং মানসিক অনুপ্রেরণা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত গঠনে সমানভাবে জরুরি। অ্যালামনাইদের এই বৃত্তি প্রোগ্রাম সেই ঘাটতি পূরণে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, ৮০ জন শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তি তুলে দেওয়া মানে শুধু আর্থিক সহায়তা নয়; এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, লক্ষ্যপানে এগিয়ে যেতে সাহস জোগাবে এবং শিক্ষাজীবনে প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে আনবে।
আমাদের প্রত্যাশা, এই সহায়তাকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের উন্নতির সোপান হিসেবে ব্যবহার করবে।
সিলেট সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসার মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, আপনারা যে উদারতা দেখালেন, তা ভবিষ্যত প্রজন্মকে আলোকিত করবে। আজ যারা বৃত্তি পেল, তারা একদিন সমাজের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে-এটাই আমাদের বিশ্বাস। তিনি এ কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য আয়োজকদের প্রতি আহ্বান জানান।
ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তারা কাজ করে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে স্কলারশিপ সাব-কমিটির মেম্বার কবির চৌধুরী বলেন, এমসি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারা বিদেশে থেকেও মাতৃপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যে আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন, তা সত্যিই অনুকরণীয়। তাদের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে-একবার এমসি কলেজের শিক্ষার্থী মানেই আজীবনের বন্ধন।
বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষকবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরের সহযোগিতায় শিক্ষার পরিবেশ আরও সমৃদ্ধ হয়। বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে অ্যালামনাইদের ভূমিকাটি অনন্য। শিক্ষার উন্নয়নে অ্যালামনাইদের এই অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশে প্রয়োজন বিভিন্ন দিক থেকে সহায়তা। এই বৃত্তি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই বৃত্তি আমাদের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে উৎসাহ দেবে এবং আর্থিক বাধা দূর করবে। ভবিষ্যতে আমরা নিজেরাও সমাজে অবদান রাখতে চাই।
বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে সিলেট এমসি এন্ড গভর্নমেন্ট কলেজ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম ইউএসএ এর চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন বলেন, আজকের এই বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান আমাদের সকলের দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টার ফল। এমসি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা সবসময়ই চাই-আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যেন আর্থিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তাদের মেধা ও স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে। দেশ-বিদেশের অ্যালামনাইদের সহযোগিতা এবং আন্তরিক অংশগ্রহণেই আজ ৮০ জন শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তি তুলে দিতে পেরেছি, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি-শিক্ষাই সমাজ পরিবর্তনের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। বৃত্তি শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা নয়; এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ববোধ এবং ভবিষ্যতের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। আজ যারা বৃত্তি পেল, তারা আগামী দিনে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে নেতৃত্ব দেবে-এই বিশ্বাস আমাদের আগামীর পথচলায় প্রেরণা জোগায়।
বেলাল উদ্দিন বলেন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিদেশে থাকলেও মাতৃপ্রতিষ্ঠানের প্রতি দায়বদ্ধতা ও ভালোবাসা থেকে আমরা এ উদ্যোগ পরিচালনা করছি। সামনে আমরা বৃত্তির পরিধি আরও বিস্তৃত করব, যাতে আরও বেশি শিক্ষার্থী এই সুবিধা পায়। আমাদের লক্ষ্য-মেধা বিকাশ, মানবিক মূল্যবোধ এবং দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরিতে অ্যালামনাইদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা।
তিনি শেষে সকল শিক্ষক, অতিথি, অ্যালামনাই সদস্য, শিক্ষার্থী এবং আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের সহযোগিতা এবং সমর্থন ছাড়া এ আয়োজন সফল হতো না। ভবিষ্যতেও আপনাদের পাশে পেয়েই এমসি কলেজের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আরও বড় ভূমিকা রাখতে চাই।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম আহমদ খান। সিলেট সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ফরিদ আহমেদ। মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর মো. তৌফিক এজদানী চৌধুরী, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর পান্না বসু, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা জামান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল হক, গণিত বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর তপতী চৌধুরী সহ কলেজের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, অ্যালামনাই সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ বছর মোট ৮০ জন মেধাবী ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তি তুলে দেওয়া হয়, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসাহ ও আনন্দ ছড়িয়ে দেয়।

-20251201152648.webp)
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন