ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন, এক বছর বা দু’বছর নয়, টানা ৩০ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন মা রহিমা বেগম।
সাইফুল ইসলাম ৩৭ বছর বয়সী এক যুবক, ছোটবেলা থেকেই মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি। অবস্থা এমন যে, শিকলমুক্ত করলেই তিনি লোকজনকে কামড়ে দেয়, আক্রমণ করে- এমনকি নিজের গায়ের কাপড় খুলে ঘুরে বেড়ায় বলেও জানায় এলাকাবাসী।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ধারিয়াল গ্রামে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে চলেছে বছরের পর বছর।
মা রহিমা বেগম, অসহায় মুখে ছেলেকে নিয়ে দীর্ঘ জীবন পার করছেন সরকারের দেওয়া একটি ঘরে।
স্বামী বহর আলী মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। স্বামী হারানো, জমিজমা হারানো এবং উপার্জনের কোনো পথ না থাকায় পথে-ঘাটে ভিক্ষা করেই সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখছেন তিনি।
সাইফুলের মা বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই ওর চেহারায় কিছুটা অস্বাভাবিকতা ছিল। কথা বলত না, মানুষকে দেখলে চেয়ে থাকত। সাত বছর বয়সে আচরণ আগ্রাসী হয়ে ওঠে- মানুষকে খামচে ধরত, কামড়ে দিত।’
‘তখন থেকেই বাধ্য হয়ে শিকলে বেঁধে রেখেছি। বহু কবিরাজ-ডাক্তারের কাছে গিয়েছি, কেউ রোগ ধরতে পারেনি।’
বর্তমানে সাইফুল বারান্দার এক কোণে শিকলে বন্দি অবস্থায় কাটান সারাদিন। কখনো বসে, কখনো শুয়ে- এভাবেই কেটে যায় সময়।
খাবার, প্রয়োজনে ওষুধ, এমনকি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সবই একাই সামলান মা রহিমা বেগম।
রহিমা বেগম জানান, ‘সরকারি ভাতা বাবদ ছেলের নামে ২,৫০০ টাকা এবং আমার নামে ১,৮০০ টাকা পাই। কিন্তু এতে সংসার চলে না। খাবার কিনতেই সব শেষ হয়ে যায়, চিকিৎসার তো প্রশ্নই আসে না।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও ধারিয়াল জামে মসজিদের সেক্রেটারি সুমন আল মামুন বলেন, ‘ছেলেটিকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। তার জন্য এলাকাবাসী যথাসাধ্য সাহায্য করেছে। কিন্তু তার চিকিৎসা ও পূর্ণবাসনের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ দরকার।’
ঘাটাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান সরকার বলেন, ‘সাইফুল ও তার মা উভয়কে ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেই যতটুকু করা সম্ভব, করেছি।’
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ বলেন, ‘সাইফুল ভাতার আওতায় থাকলেও পরিবার যদি আরও সহযোগিতার প্রয়োজন অনুভব করে, উপজেলা প্রশাসন অবশ্যই পাশে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, এচাড়াও তাদের পূর্ণবাসনের জন্য সম্ভাব্য সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। তার মা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত- এ কারণে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগও আমরা বিবেচনায় আনবো। তারা যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, আমরা সর্বাত্মক সহায়তা দেব।’